মালিককে চাদর মুড়িয়ে পাচারের আগে ধৃত পরিচারিকা, ড্রাইভার


বাড়ির  সামনে  দাঁড়িয়ে  শববাহী  গাড়ি।  পাড়ায় শববাহী গাড়ি ঢুকতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল হয় প্রতিবেশীদের।  ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকেই।  পাড়ায় তো কারও মৃত্যু খবর কানে আসেনি তাঁদের! তাতেই সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। আর আশঙ্কা সত্যি করেই গাঙ্গুলি পরিবার থেকে চাদর মোড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তিকে বার করে আনতে দেখা গিয়েছিল ওই বাড়ির ড্রাইভারকে। সঙ্গে ছিলেন পরিচারিকা।  কার মৃত্যু হয়েছে? প্রশ্ন করতেই তেড়েফুড়ে ওঠেন পরিচারিকা, ড্রাইভার। প্রতিবেশীরাও চাপ দেন। পরে জানা যায়, বাড়ির মালিক প্রাক্তন কেএমডি কর্মী পৃথিবরণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে। তারই দেহ সত্কারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাড়ার এক জনের মৃত্যুর খবর কেন জানানো হল না প্রতিবেশীদের, কেন রাতের অন্ধকারে  গাড়ি করে  সত্কারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? সল্টলেকের ইই ব্লকে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
 

 সল্টলেকের ইই ব্লকে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন প্রাক্তন কে এম ডি এর কর্মী পৃথবরণ  গঙ্গোপাধ্যায়। বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ হওয়ায়  জবা চক্রবর্তী নামক এক পরিচারিকা রাখেন তিনি।   সেই  পরিচারিকার  দাবি,  তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ২০১৬  সালে ওই ফ্ল্যাটের একাংশ তার  নামে লিখে দেন পৃথবরণবাবু। এলাকাবাসিদের অভিযোগ, জবা পৃথিবরণবাবুর বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দিতেন না।  একই অভিযোগ মৃতের দুই দাদার।

পৃথিবরণবাবুর  দাদার অভিযোগ,  তাঁরা বাড়িতে এলে তাঁদেরকে তাড়িয়ে দিতেন ওই পরিচারিকা। এই বিষয়ে থানাতেও একবার অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিস কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।

শনিবার  সন্ধ্যায়  পৃথিবরণবাবুর বাড়ির সামনে শববাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। এর পরেই পৃথিবরণবাবুর  ঘরে গেলে তাঁরা জানতে পারেন,  মৃত্যু হয়েছে পৃথিবরণবাবুর।  অভিযোগ, তাঁর দেহ  চাদরে  মুড়ে পাচার  করার চেষ্টা করছেন পরিচারিকা জবা চক্রবর্তী এবং গাড়ির চালক বাপি। সেই সময় তাঁদের আটকে রেখে পরিবারকে খবর দেয় প্রতিবেশীরা।

পরিবারের দাবি, বিকেল ৪টেয়  সময় মৃত্যু হয় পৃথিবরণবাবুর কিন্তু সল্টলেকের কোনও চিকিত্সক মৃত্যুর  শংসাপত্র দেননি।  কাদাপাড়া অঞ্চলের এক  চিকিত্সক নাকি মৃত্যুর শংসাপত্র দেন।  পরিচারিকা  জোর করে ওই বাড়িটি লিখিয়ে নিয়ে  থাকতে পারেন বলে অভিযোগ পরিবারের।

উত্তেজিত এলাকাবাসী চড়াও হন জবার ওপর। তাকে মারধর করা  হয়। বিধাননগর পূর্ব থানাতে বিষয়টি জানানো হলে পুলিশ এসে পরিচারিকা এবং গাড়ির চালক বাপিকে আটক করে এবং দেহটিকে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।  কী কারণে পরিবারকে না জানিয়ে দেহ লোপাটের চেষ্টা করছিলেন ওই পরিচারিকা,  পরিচারিকার  সঙ্গে গাড়ি চালকের কোনো সম্পর্ক  রয়েছে কিনা এবং  সত্যি সম্পত্তি পরিচারিকা লিখে নিয়েছেন কিনা,  তা তদন্ত করে দেখছে বিধাননগর পূর্ব থানার পুলিশ।