চিন ও পাকিস্তানের উপর মহাকাশ থেকে নজরদারি চালাবে ভারত

একাধিকবার বাতিল হওয়ার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার সফল ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা ও বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। 'টু প্লাস টু' (২+২) মডেলের এই আলোচনা প্রক্রিয়ায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, বন্ধুত্ব, সামরিক বোঝাপড়া আরও মজবুত করার ব্যাপারে আলোচনা হয়। দু'দেশের সামরিক বাহিনীর গোপন তথ্য (এনক্রিপটেড) আদানপ্রদান সংক্রান্ত 'কমকাসা' চুক্তি (কমিউনিকেশনস ক্যাপাবিলিটি অ্যান্ড সিকিউিরিটি এগ্রিমেন্ট) নিয়ে মতপার্থক্য ছিল শুরু থেকেই। দিল্লিতে হওয়া এই বৈঠকে সেই মতপার্থক্য দূর হল। বৈঠক শেষে মার্কিন বিদেশসচিব পম্পেও বলেন, 'বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থানে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।' অন্যদিকে, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, আমেরিকার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভারতের কাছে 'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ'। কারণ আমেরিকা হল ভারতের 'কৌশলগত মিত্র'।
 
এদিন দিল্লিতে একটানা তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব জেমস ম্যাটিস ও মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেওকে পাশে বসিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। সঙ্গে ছিলেন দুই দেশের বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের শীর্ষ অফিসাররা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের মতে, পম্পেও এবং ম্যাটিস হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দুই শীর্ষ পদাধিকারী। মার্কিন সামরিক সদর দফতর পেন্টাগনের সেনা অফিসারদের উপরও এঁদের প্রভাব এবং সক্রিয়তা খুব বেশি। তাই এই চুক্তি যেমন চিন ও পাকিস্তানের কাছে অতি উদ্বেগজনক, তেমনি দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় ভারতের একাধিপত্য ও প্রভাব আরও নিরঙ্কুশ করল এই চুক্তি। বলা ভাল ভারতের নিরঙ্কুশ ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করল পেন্টাগন এবং হোয়াইট হাউস।

এই চুক্তির ফলে, দক্ষিণ এশিয়ায় গোপন সন্ত্রাসবাদী ও অন্য দেশগুলির পরমাণু প্রস্তুতির ওপর কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে নজর রাখবে দু'টি দেশ। যখন যেমন তথ্য ও ছবি পাবে, দেরি না করে তারা তখনই সেই সব তথ্য পরস্পরকে দেবে ভারত ও আমেরিকা। শুধুমাত্র তথ্যই নয়, চিন সাগর বা অন্য জলসীমায় চিনা সাবমেরিনের গতিবিধির লাইভ ভিডিও ফিড পাঠাবে মার্কিন নৌসেনা। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চুক্তির ফলে ভারতকে 'গার্ডিয়ান' ড্রোন-সহ আরও বেশি অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রি করতে পারবে আমেরিকা। ইরান থেকে তেল আমদানি চালিয়ে যাওয়া এবং রাশিয়ার কাছ থেকে সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা ('এস-৪০০' ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র) কেনা নিয়ে আমেরিকার আপত্তি ও বাধা দূর হতে চলেছে বলে কূটনীতিকদের মত। এদিন কমকাসা চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি পাকিস্তান মদতপুষ্ট সীমান্তপারের সন্ত্রাস, নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে (এনএসজি) তে ভারতের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়া নিয়েও এদিনের বৈঠকে আলোচনা হয়। ভারতের দাবিদাওয়া ও যুক্তিগুলি গুরুত্ব দিয়ে শোনেন মার্কিন অফিসাররা। দক্ষিণ এশিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

মার্কিন মুলুকে কর্মরত এবং কাজ করতে যেতে ইচ্ছুক ভারতীয়দের 'এইচ ওয়ান বি ভিসা' সংক্রান্ত সমস্যা, তাঁদের জন্য নিময় শিথিল করার ব্যাপারে ভারত দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল। ভারতের এই ভিসা সংক্রান্ত দাবি দাওয়াগুলিও আমেরিকা গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে বলে জানিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ভারতকে সামনে রেখে আগামী ৫০ বছরের জন্য চিনকে প্রতিহত করার কথা ভাবছে আমেরিকা। চিনের প্রতিস্পর্ধী শক্তি হিসাবে ভারতকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এই কমকাসা চুক্তি করল ওয়াশিংটন। ভারতকে পরমাণু এলিট ক্লাব এনএসজির সদস্য বানাতেও তৎপর হয়েছে আমেরিকা।