গাছ থেকে নারকেল পেড়ে মাসে ৫০ হাজার টাকা আয়


কথাটা শুনে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাচ্ছে কারও কারও৷ কেউ বা ভাবছেন পুরোটাই জল মেশানো৷ কিন্তু কেরলের তুষারাগিরির বিজুকে জানলে বুঝবেন এ জগতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়৷ তিরুবনন্তপুরমের আমবুরিতে জন্ম বিজুর৷ তিনি যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়েন বাবা-মা মালাবারে চলে যান৷ বাবার মৃত্যুর পর তাঁর কাঁধেই সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে৷

এরপর আস্তে আস্তে গাছ থেকে নারকেল পাড়াকে নিজের পেশা করে নেন তিনি৷ কেরলে এই কাজের দারুণ চাহিদা৷ গত ১৮ বছর ধরে এই পেশায় রয়েছেন বিজু৷ পেশাটা শুনে অনেকেই হয়তো তেমন আগ্রহ দেখান না, কিন্তু এই পেশাতে থেকে কেরলের এই ব্যক্তি মাস গেলে যা আয় করেন তা অনেকে ঠাণ্ডা ঘরে বসেও আয় করতে পারেন না৷

একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসেই বিজু আয় করেছেন ৫২ হাজার ১৪৬ টাকা৷ সংসারের জোয়াল কাঁধে তুলে নিলেও ক্লাস টুয়েলভ পাশ করেছেন তিনি৷ তাঁর বড় ভাই পড়াশোনা শেষে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ বিজুর কাছেও আর্মি থেকে কল লেটার এসেছিল৷ যদিও তাতে আর যোগ দেওয়া হয়নি৷

তা নিয়ে অবশ্য তাঁর কোনও আফশোস নেই৷ নারকেলগাছ ঝাড়াইয়ের কাজ যখন বিজু শুরু করেন তখন গাছ প্রতি তিন টাকা পেতেন৷ এখন তো শুধু নারকেল পাড়তেই ৩০ টাকা নেন৷ গাছের মাথায় উঠে গাছ ঝারাইয়ের কাজ করলে ১০০ টাকা গাছ প্রতি৷

প্রতিদিন ১০০টা গাছে ওঠা তাঁর কাছে কোনও ব্যাপারই না৷ এভাবেই প্রতি মাসে একটু একটু করে আয় বাড়িয়েছেন তিনি৷ তাঁর স্ত্রী জেসি ডেয়ারি ফার্মার৷ দুই সন্তান রয়েছে এই দম্পতির৷ তবে বয়স বাড়ছে৷ তাই আস্তে আস্তে খাটুনি কমাতে চান৷

নিয়মিত আয়ের একটি খাতা রয়েছে বিজুর৷ সেখানে কবে কত আয় হচ্ছে তার হিসাব স্পষ্ট করে লেখা৷ কাজে বেরোনোর সময় মোবাইল সঙ্গে রাখেন না তিনি৷ ঝুঁকির কাজ৷ তাই মনসংযোগ কোনওভাবেই নষ্ট হতে দিতে চান না৷ বিকেল পাঁচটার পর বাড়ি ফিরে মোবাইলে যোগাযোগ সারেন৷

বিজুকে দিয়ে গাছ ঝারাই কিংবা নারকেল পাড়াতে গেলে অন্তত ১৫দিন আগে জানাতেই হয়৷ আগামী দেড় সপ্তাহের বুকিং ইতিমধ্যেই সারা৷ তাঁর সঙ্গে অন্যান্য যাঁরা এই পেশায় আছেন তাঁদের কাছেই বিজু একজন হতবাক করা মানুষ৷

বিজু অবশ্য বলেন, ''আমার জীবনে এই কাজটা আমি গত ১৮ বছর ধরে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি৷ দায়বদ্ধতায় কোনওরকম এদিক ওদিক করিনি৷'' নতুন প্রজন্ম এ কাজে আসছে ঠিকই৷ প্রথম দু'দিনে হাতে টাকা এলেই বাকি দিনগুলো ঘরে বসে থাকে৷ বিজুর ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি কখনও৷ তিনি তাঁর ক্লায়েন্টদের সঙ্গে প্রপার কমিউনিকেশনে বিশ্বাসী৷ তাঁর নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাই তাঁকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে৷