বনগাঁয় চা-মুদির দোকানে মিলছে দেশি মদ!


আর পাঁচটা চায়ের দোকানের মতো সেখানেও ভিড় হয় সকাল-সন্ধ্যা। চা-বিস্কুটের ফাঁকে আড্ডা চলে দেদার। তারই ফাঁকে সকলের চোখ এড়িয়ে ওই দোকান থেকেই চলে বেআইনি মদের কারবার।

সম্প্রতি গাইঘাটা থানার পুলিশ ফুলসরা পাঁচপোতা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এমনই এক চায়ের দোকানের খোঁজ পেয়েছে। পুলিশ দেশি মদ-সহ ওই দোকানের মালিক এক মহিলাকে গ্রেফতার করে। 

অভিযোগ, বনগাঁ মহকুমার গ্রামীণ এলাকা জুড়ে চায়ের দোকান, মুদি দোকান,  পানের দোকান-সহ বিভিন্ন দোকানের আড়ালে চলছে বেআইনি দেশি মদের কারবার। লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে দেশি মদ কিনে এনে তা বেআইনি ভাবে দোকানগুলিতে বিক্রি করছেন দোকানিরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈধ দোকান থেকে দেশি মদ কিনে তার মধ্যে তরল জাতীয় কোনও পদার্থ মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। মানুষ অনেক সময়ে ওই মদ খেয়ে অসুস্থও হয়ে পড়েন। 

গ্রামের গরিব মানুষ ওই সব দোকান থেকে মদ কিনে নেশা করেন। যুবকদেরও দেখা যাচ্ছে নেশা করতে। সারা দিনের খাটুনির টাকা চলে যাচ্ছে নেশার পিছনে। এতে সংসারে অশান্তি বাঁধছে বলে মহিলারা জানালেন। 

কিছু দিন আগে বাগদা থানার আউলডাঙা এলাকায় মদের নেশায় আসক্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, এলাকায় মুদি দোকানে বেআইনি ভাবে দেশি মদ বিক্রি হয়। এলাকার মহিলারা  কয়েকটি মুদির দোকানে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করেন। 

পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, বেআইনি দেশি মদের কারবার বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চলছে। নেশা বন্ধ করতে পুলিশের তরফে প্রচারও করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায় নিজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে দেশি মদের নেশা বন্ধ করতে মানুষের কাছে আবেদন করছেন। তিনি বলেন, ''প্রতি মাসে মহকুমা থেকে গড়ে ৩৫ জন বেআইনি মদের কারবারিকে পুলিশ গ্রেফতার করছে। আটক হচ্ছে প্রচুর দেশি মদ। নজরদারি বাড়ানোর জন্য মহকুমার থানাগুলিকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।''

মুদি দোকান বা চায়ের দোকানে পুলিশের নজরদারি কম থাকে। তা ছাড়া, আগে থেকে তথ্য না জানা থাকলে পুলিশের তরফে দোকানগুলিতে তল্লাশি চালানো সম্ভব হয় না। অভিযোগ, এই কারবারে পুলিশের একাংশের মদতও  রয়েছে। সে কথা অবশ্য মানছেন না পুলিশ আধিকারিকেরা। অতীতে বনগাঁ মহকুমায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার ছিল। আমডোব, গাঙ্গুলিয়া, মুড়িঘাটা, পারমাদনের মতো এলাকায় কারবার চলত। মানুষ চোলাইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতেন। বনগাঁর বাইরে থেকেও গাড়ি করে কারবারিরা চোলাই পৌঁছে দিত প্রত্যন্ত গ্রামে।  পুলিশ-প্রশাসনের লাগাতার ধরপাকড় ও গ্রামবাসীদের নিয়ে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচির ফলে চোলাইয়ের কারবার এখন এ সব জায়গায় কার্যত বন্ধ। তার জায়গা নিয়েছে দেশি মদ।