মোবাইল সারাতে গিয়ে খুন! নেপথ্যে কি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক?

অর্চনা পালংদার।

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই কি খুন হতে হল উল্টোডাঙার গৃহবধূকে?  প্রাথমিক তদন্তের পর সেই সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে তদন্তকারীদের মনে। নিহতের বস্তাবন্দি দেহ বৃহস্পতিবার চৌবাগা লকগেটে উদ্ধার করে আনন্দপুর থানার পুলিশ।

প্রথমে মহিলার পরিচয় জানা যায়নি। রাতে পুলিশ জানতে পারে,  মৃতের নাম অর্চনা পালংদার। তিরিশ বছর বয়সী ওই মহিলা উল্টোডাঙা থানা এলাকার জওহরলাল দত্ত রোডের বাসিন্দা।

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। মোবাইল সারানোর কথা বলে দুপুরে বেরোন। তার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই মহিলাকে। স্বামী পিন্টু পালংদার একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল তাঁর পরিবার উল্টোডাঙা থানাতে নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতের পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, অর্চনার একাধিক বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। এর আগে দু'বার তিনি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের অভিযোগ, ওই দু'বারই তিনি অন্য কোনও 'বন্ধু'র সঙ্গে গিয়েছিলেন। মৃতার দুই সন্তান। এক তদন্তকারী জানিয়েছেন, "আমরা পরিবারের কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছি। তবে তাঁদের অভিযোগের সঙ্গে আদৌ  খুনের কোনও যোগ আছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।" তদন্তকারীরা মৃতার স্বামীকেও এখনই সন্দেহের বাইরে রাখছেন না। তাঁরা স্বামী এবং অর্চনার পরিবারকেও জেরা করছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পশ্চিম চৌবাগা ড্রেনেজ পাম্পিং স্টেশনের কর্মীরা দু'নম্বর লকগেটের কাছে একটি বড় বস্তা আটকে থাকতে দেখেন। বস্তাটিকে খুঁটিয়ে দেখার পরে তাঁরা বুঝতে পারেন, ভিতরে ভারী কিছু রয়েছে। এর পরেই খবর দেওয়া হয় আনন্দপুর থানায়।

পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে পাম্পিং স্টেশনের কর্মীরা লকগেটের মুখ থেকে সেই বস্তা তুলে আনেন। বস্তার বন্ধ মুখ কেটে ২৮-৩০ বছর বয়সী এক মহিলার দেহ পাওয়া যায়। তদন্তকারীরা জানান, লাল রঙের কুর্তি ও কালো পাজামা পরা ওই মহিলার দেহে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দেহটি উদ্ধারের পরেই লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশকর্তারা জানান, ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে বলেই তাঁদের সন্দেহ। তবে, যা ঘটেছে, তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ঘটেছে। কারণ, উদ্ধার হওয়া মৃতদেহে তখনও কোনও পচন ধরেনি। এমনকি, মৃতার পায়ের চামড়া সাদা হয়ে গেলেও পা ফোলেনি।

লালবাজারের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা এবং আনন্দপুর থানার পুলিশ যৌথ ভাবে তদন্ত করে দেখছেন এই খুনের পেছনে কে বা কারা রয়েছে। ওই মহিলা নিখোঁজ হওয়ার দিন কোথায় গিয়েছিলেন তা তাঁর মোবাইল কল ডিটেলস এবং লোকেশন দেখে বোঝার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।