সব দপ্তরের অ্যাকাউন্টে নজরদারি নবান্নের

আর্থিক অনিয়ম রুখতে সব দপ্তরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর নজরদারি বাড়াতে চায় নবান্ন। সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকা সব বিভাগ এবং স্বশাসিত সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব চেয়েছে অর্থ দপ্তর। জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের নিজস্ব ফিক্সড ডিপোজিটের হিসেবও। এর জন্য কয়েক দিন আগেই বিভিন্ন দপ্তরের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন রাজ্যের অর্থসচিব এইচ কে দ্বিবেদী। নবান্ন সূত্রে খবর, অর্থ দপ্তরের জারি করা ওই নির্দেশিকার কপি (এফএস-৯৩, তারিখ-৪/৯/২০১৮) অতি সম্প্রতি পাঠানো হয়েছে রাজ্যের সব অতিরিক্ত মুখ্যসচিব, প্রধান সচিব এবং বিভাগীয় সচিবদের কাছে। তাতে জানতে চাওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির কোন কোন ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে? সেখানে কত টাকা জমা রয়েছে। কোন ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট রয়েছে।

ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমাণ এবং সমস্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও জানতে চাওয়া হয়েছে। তাতেই সন্দিহান বিভাগীয় আধিকারিকরা। আধিকারিকদের একাংশের আশঙ্কা, এত দিন বিভিন্ন দপ্তর টাকা খরচের ব্যাপারে যে স্বাধীনতা ভোগ করত, অর্থ দপ্তরের নতুন নির্দেশিকায় তা অনেকটাই খর্ব হবে। প্রতিটি দপ্তরের কাজে অর্থ দপ্তর প্রত্যক্ষ নজরদারি চালাতে পারবে। প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা জানাচ্ছেন, আর্থিক শৃঙ্খলা ফেরাতে অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে এর আগেও একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছে। তবে অর্থ দপ্তর কোনও দিন দপ্তরগুলির ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টের হিসেব চেয়েছে, এমন নজির নেই। তাই অর্থ দপ্তরের এই পদক্ষেপ নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কোষাগার ভরাতে কয়েক মাস আগেই বিভিন্ন দপ্তরের হাতে পড়ে থাকা অব্যবহৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো সব দপ্তরই খরচ না হওয়া টাকা ফেরত দিয়েছে। তা থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজ্য কোষাগারে জমা পড়েছে। তারপরেও সন্দেহ কাটছে না অর্থ দপ্তরের কর্তাদের। 

তাঁদের বদ্ধমূল ধারণা, বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অব্যবহৃত টাকা ফেরত এলেও দপ্তরগুলির হাতে এখনও অনেক টাকা রয়ে গিয়েছে। প্রতিটি সরকারি দপ্তরের এক বা একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। কেউ আবার ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করিয়ে রেখেছে। সেই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকা জমা থাকতে পারে। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর এবং সরকার অধীনস্ত সংস্থাগুলি তাদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা রাখছে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে অর্থ দপ্তর। এত দিন পর সেই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের উপর নজর পড়েছে নবান্নের। অর্থ দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার ব্যাখ্যা, রাজ্যে আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা আইএফএমএস চালু হয়েছে। তাতে সমস্ত দপ্তরকে আনা হবে। এর মাধ্যমে প্রতিটি সরকারি দপ্তর কখন কোথায় কী খরচ করছে, কোন ব্যাঙ্কে তারা টাকা জমা রাখছে, তার হিসেব রাখা হবে। নবান্ন থেকেই তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। তারই অঙ্গ হিসেবে দপ্তরগুলির কাছ থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব চাওয়া হয়েছে।