তিন লক্ষ টাকা গায়েবের পর ফোন, কাকু টাকা তুলে নিলাম


আসানসোল: 'কাকু আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে দু'দিনে তিন লক্ষ টাকা তুলে নিলাম। ভালো থাকবেন।' অ্যাকাউন্ট থেকে অনলাইনে টাকা হাতানোর পর আসানসোলের সূর্য সেন পার্কের এক অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মীকে ফোন করে এমনটাই জানায় এক সাইবার অপরাধী। ওই অপরাধীর ফোন পেয়েই হুঁশ ফেরে ৭০ বছরের ওই রেলকর্মীর। তিনি তড়িঘড়ি ব্যাঙ্কে গিয়ে দেখেন সত্যিই তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে দু'দিনে তিন লক্ষ টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে। এরপর বিষয়টি তাঁর ছেলেকে জানান বৃদ্ধ। এরপরই এটিএম কার্ডটি ব্লক করা হয়।

পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাক্তন ওই রেল কর্মী আসানসোল দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ সাইবার ক্রাইম দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, ফোনটি ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছিল। ওই অপরাধী অনলাইনে একটি অ্যাকাউন্টে তিন লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে সে টাকা খরচ করে। পুলিস কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে জনগণকে বারবার সচেতন করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তাঁরা ভুল করছেন। বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়েও সচেতনতামূলক শিবির করা হচ্ছে।

প্রতারিত ওই প্রাক্তন রেলকর্মী বলেন, ১২সেপ্টেম্বর বিএনআর মোড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়ে নতুন এটিএম কার্ড নিয়ে আসি। পুরনো কার্ডের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছিল। ১৩সেপ্টেম্বর ব্যাঙ্ক আধিকারিক পরিচয় দিয়ে আমাকে একজন ফোন করে। সে আমাকে কার্ডের নম্বর বলতে বলে। প্রথমে কিছু বলতে চাইনি। কিন্তু ফোনে ও আমাকে এমনভাবে প্রভাবিত করে যে তাকে বিশ্বাস করে এটিএম কার্ডের নম্বর দিয়ে দিই। পরে ওটিপি নম্বরও বলে দিয়েছিলাম। এমনকী আমার স্ত্রীর কাছে থাকা আরএকটি এটিএম কার্ডের নম্বরও তাকে বলে দিয়েছিলাম। তখনও বুঝতে পারিনি এত বড় চক্রে পা দিয়েছি। প্রতারক দুটি কার্ড থেকে মোট ছ'বারে তিন লক্ষ টাকা তুলেছে। প্রতিবারই টাকা তোলার সময় আমার মোবাইলে মেসেজ এসেছিল। কিন্তু বয়সের ভারে তা ঠিকমতো লক্ষ্য করতে পারিনি। পরে ওই প্রতারকই ফোন করে টাকা তোলার কথা স্বীকার করে। ওই অপরাধী আমার অন্যান্য কার্ডের নম্বরও জানতে চাইছিল। তা না দিতে চাওয়ায় ও আমাকে গালিগালাজ দিতে থাকে। সেই থেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।

এক পুলিস আধিকারিক বলেন, যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেটি ঝাড়খণ্ড এলাকার। ওই রাজ্যের জামতাড়ার কাছে একটি বড় চক্র এখনও কাজ করছে। তারা বিভিন্নভাবে এটিএম কার্ডের নম্বর জেনে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। প্রাক্তন ওই রেলকর্মী আরও বলেন, অপরাধী এতটাই বেপরোয়া যে ও ফোন করে আমাকে টাকা তুলে নেওয়ার কথা জানাতেও ভয় পায়নি। এদের চরম শাস্তি হওয়া দরকার। তা না হলে আমার মতো অনেকেই বিপাকে পড়বে।

প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেও আসানসোলে কেন্দ্রীয় সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের মেয়ের অ্যাকাউন্ট থেকেও কয়েক হাজার টাকা গায়েব হয়ে যায়।