৪২০ বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য ছেড়ে বানপ্রস্থে চিনের নব-প্রজন্মের 'ভগবান'


পিছনে পড়ে থাকল ৪২০ বিলিয়ন ডলারের এক বিশাল সাম্রাজ্য। এবার এক নতুন দিশায় খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন জ্যাক মা। তৈরি করে গেলেন এক অসামান্য নজির। বিশ্বখ্যাত চিনা ইন্টারনেট সংস্থা আলিবাবার বিলিয়ন ডলার মালিক জ্যাক মা রবিবার থেকে ছেড়ে দিলেন তাঁর সংস্থার এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান-এর পদ। এখন থেকে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে সমাজসেবা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিশ্বজুড়ে সেরা উদ্যোগপতিদের তালিকায় জ্যাক মা-এর ঢুকে পড়াটা ছিল একটা অসমান্য বিষয়। পরিকল্পনা, ইচ্ছা এবং বিনিয়োগ-কে বোঝার মতো মানসিকতা থাকলে কোথায় পৌঁছনো যায় তা প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মা। সামান্য একজন ইংরাজী শিক্ষক থেকে তিনি আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা উদ্যোগপতিদের মধ্যে একজন। এককালে ইংরাজী পড়িয়ে মাসে ১৫ ডলার আয় করা মা-এর নিজস্ব সম্পদেরই মূল্য ৪০ বিলিয়ন ডলার। আর তাঁর তৈরি করা সংস্থার সম্পদের মূল্য ৪২০ বিলিয়ন ডলার। 

ই-কমার্স বিজনেসে আলিবাবার এখন একটি ব্র্যান্ড। এমনকী তাবড় তাবড় মার্কিন সংস্থাও এশিয় মাহাদেশে আলিবাবার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার আগে দশবার ভাবে। ১৯৯৯ সালে আলিবাবা তৈরি করেছিলেন মা। সেখান থেকে আজ তাঁর তৈরি সংস্থা ই-কমার্স থেকে ডিজিটাল পেমেন্টস, ডিজিটাল কনটেন্ট শেয়ারিং নিয়ে ব্যবসা করছে। এমনকী, কীভাবে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে চিনারা ঘরে বসেই সমস্ত কাজ করতে পারেন তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মা-এর সংস্থা আলিবাবা। নব প্রজন্মের চিনা যুবকদের কাছে আদর্শ জ্যাক মা। বহু মানুষ তাঁর ছবি ঘরের টাঙিয়ে রেখে রোজ পুজোও করেন। তাঁকে অনেকে ধন-সম্পত্তির দেবতা বলেও ডাকেন। 

চিনা অর্থনীতি এই সময়ে এক বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিং পিং-এর সময়ে চিনের ইন্টারনেট শিল্পক্ষেত্রে বিপুল উন্নতি করেছে। কিন্তু, আমেরিকার সঙ্গে চিনের ট্রেড ওয়ারের প্রভাব পড়েছে চিনা অর্থনীতিতে। এর ফলে কিছুটা হলেও চিনা শিল্পে একটা সাময়িক মন্দা তৈরি হয়েছে। বাড়ছে ঋণের বোঝা। এমন এক পরিস্থিতিতে আলিবাবার শীর্ষপদ থেকে জ্যাক মা-এর সরে যাওয়াটা চিনের অর্থনীতিটর পক্ষে ভালো বার্তা নয় বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। 

জ্যাক মা-কে নিয়ে বই লিখেছেন ডানকান ক্লার্ক। যে বই-এর নাম 'আলিবাবা: দ্য হাউজ জ্যাক মা বিল্ট', তাঁর মতে, 'জ্যাক মা চিনার বেসরকারি তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে একটা বিশাল নাম। তার পদক্ষেপ অনুসরণ করে বহু চিনা সংস্থা সাফল্যও পেয়েছে। তবে তাঁর অবসর একটি প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল যে তিনি হতাশা না অন্য কোনও কারণে এই সিদ্ধান্ত নিলেন?' 

সোমবারই মা-এর ৫৪তম জন্মদিন। তার আগে সংস্থার শীর্ষ পদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কার্যকর করলেন তিনি। যদিও, সংস্থার বোর্ড অফ ডিরেক্টরস এবং সংস্থার মেন্টর হিসাবে কাজ করে যাবেন তিনি। মা পদত্যাগ করায় তাঁর স্থানে দায়িত্ব নিতে চলেছেন ড্যানিয়েল ঝ্যাঁ। ২০১৩ সালে সংস্থার সিইও পদ থেকে মা-এর পদত্যাগের পর ঝ্যাঁ সেই স্থানে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। সরে গেলেও আলিবাবার উপরে মা-এর নিয়ন্ত্রণ যে কমবে তা পরিস্কার। কারণ তিনি সংস্থার ৬.৪% শেয়ার তাঁর কাছে। এছাড়াও আলিবাবার কিছু আইনি জটিলতা রাখা হয়েছে যার ফলে মা-এর মালিকানাকে একবারে অস্বীকার করা যাবে না। 

আলিবাবা প্রথমে অনলাইন মার্কেট প্লেস হিসাবে ব্যবসা শুরু করেছিল। এখানে তাদের প্রোডাক্ট অনলাইনে সারসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুবিধা পেতেন বিক্রেতারা। এরপর আলিবাবা অনলাইন পেমেন্ট ব্যাঙ্কিং-এর কাজ শুরু করেছিল। যার নাম আলি-পে। চিনে সেভাবে ক্রেডিট কার্ড প্রচলিত ছিল না। যার ফলে আলি-পে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। এই অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পরে অ্যান্ট ফিনান্সিয়াল হিসাবে কাজ শুরু করে। বর্তমানে আলিবাবার ব্যবসা ই-কমার্স থেকে শুরু করে অনলাইন ব্যাঙ্কিং, ক্লাউড কম্পিউটিং, ডিজিটাল মিডিয়া এবং বিনোদন-ক্ষেত্রে ছড়িয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি কর্পোরেট মেসেজিং-এ কাজ শুরু করেছে এই সংস্থা। এমনকী মিডিয়া ব্যবসাতেও অংশিদারিত্ব রয়েছে আলিবাবার। টুইটার-এর মতোই চিনে উয়েইবো নামে একটি জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া রয়েছে। তাতে অংশিদারিত্বও রয়েছে আলিবাবার হাতে। এছাড়াও হংকং-এর ইংরাজি দৈনিক দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এও অংশিদারিত্ব রয়েছে।

সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন জ্যাক মা। অবসরের পর সমাজহিতৈষী হিসাবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারে জ্যাক মা বলেন, বিল গেটসের মতো ধনী তিনি কোনও দিনই হতে পারবেন না। তবে একটা বিষয়ে তাকে টেক্কা দিতে পারেন। আর সেটা হল আগে অবসর নিয়ে। কারণ বিল গেটস ২০১৪ সালে যখন অবসর নেন তখন তাঁর বয়স ছিল ৫৮ বছর।