অপুষ্টি দূরীকরণে রেশনে মিলবে ভিটামিন চাল


দেশ থেকে অপুষ্টি দূরীকরণের লক্ষ্যে রেশনে ভিটামিন-যুক্ত চাল বিলির পরিকল্পনা নরেন্দ্র মোদী সরকারের। দেশের সব রাজ্যে একটি করে জেলা বেছে নিয়ে সেখানে 'পাইলট প্রজেক্ট' চালু করতে চাইছে তারা। রাজ্যগুলির মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক।

দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটলেও বড় অংশের মানুষ এখনও রক্তাল্পতায় ভোগেন। তার অন্যতম বড় কারণ হল অপুষ্টি। সকলকে পুষ্টিকর খাবার জোগাতে তাই রেশনের মাধ্যমে ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন যুক্ত চাল বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাইস মিলেই এই বিশেষ ধরনের চাল উৎপাদন করা সম্ভব। যার বৈজ্ঞানিক নাম রাইস ফর্টিফিকেশন। রেশনের মাধ্যমে সেই চাল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশের প্রায় ৫৮ শতাংশ শিশু (৬-৫৯ মাস) এবং ৫৩ শতাংশ সন্তানসম্ভবা মহিলা রক্তাশূন্যতায় ভোগেন। ছেলেদের মধ্যে যাঁদের বয়স ১৫-৪৯ বছরের মধ্যে, তাঁদের প্রায় ২২ শতাংশই অ্যানিমিয়ার শিকার। একজন মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার দরকার, সেটা দেশের প্রায় ৫০-৭০ শতাংশ মানুষই পান না। যদিও কোনও দেশের উন্নতির সূচক হিসাবে এ এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। সেই ঘাটতি পূরণে রেশনের মাধ্যমে কম পয়সায় ভিটামিন ও মিনারেল মেশানো চাল বিলির পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। গমের ফর্টিফিকেশনের খরচ অনেক বেশি। তাই রেশন থেকে ফর্টিফায়েড চাল বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন খাদ্য দপ্তরের কর্তারা। 

জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট অনুসারে, দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষের মূল খাদ্য হল চাল। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনায় রেশনে যে সব খাদ্যদ্রব্য বিলি করা হয়, তার বেশিটাই চাল। শুধু আইসিডিএস প্রকল্পে বছরে প্রায় ৫ লক্ষ ১৩ হাজার মেট্রিক টন চাল বিলি হয়। খাদ্য সুরক্ষার সঙ্গে এ বার দেশবাসীর পুষ্টি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কোমর বেঁধে নামছে মোদী সরকার। 

খাদ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, চাল, গম, দুধ এবং ভোজ্য তেলের ফর্টিফিকেশন কী ভাবে করা হবে, তার মান ঠিক করে দিয়েছে ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই)। ওডিশার গজপতি এবং ঢেঙ্কানল জেলায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, দেশে বর্তমানে যে গণবণ্টন ব্যবস্থা চালু রয়েছে, তার মাধ্যমে মানুষের কাছে ভিটামিন যুক্ত চাল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। সেটাকেই সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রকের। 

পশ্চিমবঙ্গের মতো দেশের অনেক রাজ্য সরকারই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনে নেয়। তারপর সেই ধান চলে যায় সরকারের বাছাই করা রাইস মিলে। সেখানে চাল উৎপাদনের পরে তা ফিরে আসে সরকারি গুদামে। সেই চাল ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে রেশন দোকানগুলিতে চলে যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, রাইস মিলে চাল উৎপাদনের সময়ই ফর্টিফিকেশন করা হবে। সেই চাল নিজেদের গুদামে আলাদা করে রাখবে এফসিআই। সেখান থেকে তার ডিস্ট্রিবিউশন হবে। রাইস মিল না থাকলে গুদামঘরে ফর্টিফিকেশন করা হবে।