বীরভূমে ধর্ষণে নির্যাতিতার পরিবারকে সালিশি সভায় প্রাণনাশের হুমকি


সিউড়ি: ধর্ষণের মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রবল চাপ। আর তা না করায় সালিশি সভা ডেকে ধর্ষিতার পরিবারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করল গোটা গ্রাম। জল বন্ধ। গ্রামে কথা বলা বন্ধ। দোকান, ধোপা, নাপিত সব বন্ধ। এমনকী, প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। গ্রামের মাতব্বরদের দাবি,  ধর্ষিতাকে তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দাবি শুনে নির্যাতিতা আদিবাসী গৃহবধূ সোমবার বীরভূমের জেলাশাসকের কাছে তাঁর পরিস্থিতির কথা জানালেন। নির্যাতিতা জানান, রবিবার সালিশির নিদানের পর রাতের অন্ধকারে গ্রামের ইদারা থেকে চার বালতি জল চুরি করে এনে তাঁদের ছ'জনের সংসার চলছে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা জানান, 'ওই পরিবারকে গোটা বিষয়টি লিখিতভাবে জানাতে বলেছি। একইসঙ্গে মহম্মদবাজার বিডিওকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুম্বুনি গ্রামের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে যাচ্ছে প্রতিনিধিদের একটি দল।'

মাস তিনেক আগে জঙ্গলে ছাতু আনতে গিয়ে ধর্ষিতা হন ওই গৃহবধূ। গ্রাম থেকে গৃহবধূদের একটি দল প্রতিদিনের মতো জঙ্গলে গিয়েছিলেন। তখন আমগাছির জনা তিনেক যুবক তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। গৃহবধূর কথায়, অভিযুক্তরা ঘটনাস্থলে বসে মদ্যপান করছিল। ঘটনার দিন রাতেই মহম্মদবাজার থানায় বাবলু সোরেন,  আনন্দ সোরেন,  বাবুলাল মুর্মুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা গৃহবধূ। পুলিশ তদন্তে নেমে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে। বিচারকের নির্দেশে ধৃতরা এখন জেলবন্দি।

সেই মামলা প্রত্যাহারের জন্য রবিবার ভুতুরা পঞ্চায়েতের দুম্বুনি গ্রামে সালিশি বসায় আদিবাসী সমাজ। আগেও অভিযুক্তের পরিবার টাকা নিয়ে মামলা প্রত্যাহারের কথা বলে। তাতে রাজি না হওয়াতে সালিশির দিনও সেই দাবি ওঠে। দাবি মানতে না চাওয়ায় নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গ্রামের মাতব্বররা। পরিবারটির জন্য পুকুর, দোকান, হাট সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নির্যাতিতার স্বামীর অভিযোগ, 'অভিযুক্তরা আমাদের গ্রাম থেকে আট কিলোমিটার দূরের গ্রামের  বাসিন্দা। তাদের জন্য আমাদের গ্রামের এত দরদ কেন তা বুঝলাম না। এমনকী, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় কয়েকজন।' ভয়ে ওই দম্পতি সোমবার সকালেই অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। পরে জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্ত ঘটনার কথা জানান। ধর্ষিতার পরিবারের দাবি, এই হুমকির পিছনে কোনও ব্যক্তির স্বার্থ জড়িত আছে। তাই এই চক্রান্ত। এই ঘটনার পর নির্যাতিতার সমর্থনে জেলা শাসকের কাছে যান স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তিরও দাবি তুলেছেন তাঁরা।