অপসারিত অধীর, প্রদেশ কংগ্রেসের নয়া সভাপতি সোমেন মিত্র

প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হল অধীররঞ্জন চৌধুরীকে। নতুন সভাপতি হলেন সোমেন মিত্র। গত বেশ কয়েক বছর রাজনীতির মাঠে-ময়দানে প্রায় দেখাই যায়নি যে নেতাকে, সেই সোমেন মিত্রকে এক ধাক্কায় বাংলার কংগ্রেসের মুখ করে তোলা হবে, এমনটা রাজনৈতিক শিবিরে বেশ অপ্রত্যাশিতই ছিল। তাই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে সোমেনের প্রত্যাবর্তনের খবর বেশ হইচই ফেলেছে রাজনৈতিক শিবিরে।

এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক অশোক গহলৌতের জারি করা এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের নতুন সভাপতি হচ্ছেন সোমেন মিত্র। এত দিন যিনি সভাপতি ছিলেন, সেই অধীর চৌধুরীকে করা হচ্ছে প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান। প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকেও নিয়ে আসা হয়েছে সামনের সারিতে। কো-অর্নিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাঁকে। চার জন কার্যনির্বাহী সভাপতির নামও ঘোষণা করেছে এআইসিসি। তাঁরা হলেন মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি,  দক্ষিণ মালদেহ সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী এবং বাঘমুন্ডির বিধায়ক তথা বিধাসভায় বিরোধী দলের উপনেতা নেপাল মাহাত। 

সোমেন মিত্র এর আগে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত। তিনি সভাপতি থাকাকালীনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে তৃণমূল তৈরি করেন। ১৯৯৮ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় কংগ্রেস মাত্র ১টি আসন পাওয়ায় পরাজয়ের দায় স্বীকার করে সোমেন মিত্র প্রদেশ সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ান।

২০০৮ সালের জুলাই মাসে সোমেন কংগ্রেস ছেড়ে প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস  গড়েন। ২০০৯ সালে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। সেই বছরই ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। সোমেনের ছেড়ে যাওয়া শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে জেতেন সোমেনেরই স্ত্রী শিখা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও শিখা তৃণমূলের হয়ে জেতেন। তবে কিছু দিনের মধ্যেই প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেন তিনি। এই পর্বে সোমেন মূলত নীরব থাকার লাইন নেন।

২০১৪-র জানুয়ারি মাসে সোমেন আবার কংগ্রেসে ফেরেন। তার আগে তৃণমূলের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন এই প্রবীণ নেতা।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে যে অধীর চৌধুরীকে সরানো হবে, এমন কোনও আভাস কিন্তু বিধান ভবনের কাছেও ছিল না। শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতদের যে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হতে পারে, সে জল্পনা বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু অধীরকে সরিয়ে সোমেনকে সভাপতি পদে আনা হবে, এমন কোনও পূর্বাভাস একেবারেই ছিল না। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গাঁধী নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক গৌরব গগৈ সে বিষয়ে কোনও বিশদ প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি। তিনি বলেছেন, ''প্রদেশ সভাপতি পদে বদল হয়েছে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। এখনই প্রতিক্রিয়া দেব না। এআইসিসি-তে নানা বিষয় নিয়েই কথা চলছে। সময় মতোই প্রতিক্রিয়া জানাব।''

সোমেন মিত্র বলেছেন, ''দলকে শক্তিশালী করতে হবে। না হলে মানুষের সমর্থন পাওয়া যাবে না। তাই আপাতত দলকে শক্তিশালী করাই আমার প্রথম দায়িত্ব হবে।''

সাংসদ তথা নবনিযুক্ত কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, ''দলকে সংঘবদ্ধ করা জরুরি ছিল। সেই লক্ষ্যেই এআইসিসি পদক্ষেপ করেছে।''