সেতু, রাস্তা ভাঙলে দায় নিতেই হবে ইঞ্জিনিয়ারকে, ওজর চলবে না


মাঝেরহাট ব্রিজ দুর্ঘটনায় দোষীদের খুঁজতে তদন্ত করানো হবে। দোষীদের শাস্তি হবে। মঙ্গলবার দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বৈঠকে তিনি বলেন, এখানে অনেক মিরজাফর রয়েছেন। তাঁদের চিহ্নিতও করা হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, মাঝেরহাট ব্রিজ–কাণ্ডের তদন্তও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দু–একদিনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে এ নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়বে।

ঠিক হয়েছে, পুজোর পরেই শুরু হবে মাঝেরহাট ব্রিজ মেরামতের কাজ। তবে পুজোর সময় ও আগে ওই অঞ্চলে বাড়তি যান–চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য বিকল্প দুটি পথ তৈরি করে ফেলা হবে। এর জন্য শিয়ালদা ডিভিশন যাতে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করে তার নির্দেশ দিয়েছে রেল।

নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, ভেঙেপড়া মাঝেরহাট ব্রিজ কীভাবে তৈরি হবে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। ব্রিজের যে অংশ ভেঙে পড়েছে, শুধু সেই অংশটিই তৈরি করা হবে, না কি তার সঙ্গে বাকি অংশটিও সংস্কার এবং বাড়তি ওজন কমানো হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

মাঝেরহাট ব্রিজের পাশে বিকল্প পথ দুটি তৈরি করতে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। কেএমসি, কেএমডিএ, পিডব্লিউডি এবং রেল সমন্বয় রেখে কাজ করছে। কীভাবে কাজ করলে ওই দুটি পথ খুব কম সময়ে চালু করে দেওয়া সম্ভব, তা দেখা হচ্ছে। মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পর বেহালা, বজবজ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সমস্যা হচ্ছে। এর জন্য ইতিমধ্যে মেট্রো বাড়তি ট্রেন চালাচ্ছে। বজবজ রুটে বাড়তি ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিন পিডব্লিউডি–র সুপারিন্টেন্ডেন্ট–সহ ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল, তথ্য–প্রযুক্তি, সড়ক বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে বৈঠক করেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মাঝেরহাট ব্রিজের মতো ঘটনা রাজ্যের আর কোথাও যাতে না ঘটে তার জন্য কড়া মনোভাব নিয়েছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে খবর, ৪টি বিষয় নিয়ে এদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বলা হয়েছে, এবার থেকে কোনও সেতু বা রাস্তা ভাঙলে সংশ্লিষ্ট যে ইঞ্জিনিয়ার এর দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁকেই দায়ী হতে হবে। উঁচুতলার কেউ দায়িত্ব নেবেন না। পদ্ধতিগত কারণে দেরি হয়েছে, এমনটাও শোনা হবে না। টেন্ডার প্রক্রিয়া বা অর্থ দপ্তরের কারণে দেরি হয়েছে, সেটাও মানা হবে না। শোনা হবে না টাকা নেই এমন কথাও। ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে কোনও ব্রিজ বা সেতু মেরামত করতে হলে নিজেদেরকেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করিয়ে নিতে হবে। পরে তার অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। অন্য দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব কিংবা জবরদখলের কারণে কোনও সেতু সংস্কার করা যায়নি— এটাও আর মানা হবে না। ইঞ্জিনিয়ারদের বলে দেওয়া হয়েছে, দুর্ঘটনা এড়াতে সজাগ থাকতে হবে প্রতি মুহূর্তে। ঘরে বসে থাকলে হবে না। প্রত্যেককে পথে নামতে হবে।

ঠিক হয়েছে, সমন্বয়ের অভাবে যাতে কোনও সেতুর সংস্কারের কাজ থমকে না থাকে তার জন্য আগামী শুক্রবার সেচ দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে পূর্ত দপ্তর। সেচ দপ্তরের বেশ কিছু সেতু আছে যেগুলির সংলগ্ন রাস্তা পিডব্লিউডি–র। ওই সেতুগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পিডব্লিউডি–কেই দেওয়া হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।‌‌‌‌