মাদকের টাকা মেটাতে বাবাকে বন্ধক রাখলো ছেলে।

লালবাগ: পাওনাদারদের হাত থেকে বাঁচতে বাবাকে অপহরণ করে মাদক কারবারিদের কাছে জিম্মা রেখে পলাতক ছেলে। মাদক পাচারকারী গুণধর ছেলে সেঞ্জারুলকে পুলিশ ধরতে না পারলেও, রবিবার তার নিরীহ বাবা মতিউর রহমানকে মালদার বৈষ্ণবনগর থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছে লালগোলা থানার পুলিশ।
 
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালগোলা থানার গণেশপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁর পরিবার ৩১ আগস্ট থানায় লিখিত অভিযোগ করে। তার দু'দিন পর মতিউরের স্ত্রী সাদেনুর বিবি তাঁর স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ফের থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, স্বামীর মুক্তিপণ হিসেবে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হচ্ছে। এই অভিযোগ পেয়ে লালগোলা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকারের নেতৃত্বে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এর পরেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে অপহৃতের পরিবার জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে বিচার চেয়ে আবেদন করে। ততদিনে লালগোলা থানার পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই অপহরণের সঙ্গে মতিউরের পরিবারের লোকজন যুক্ত আছে। তদন্তে শেষে পুলিশ জানতে পারে, ২২ আগস্ট মতিউরের ছেলে সেঞ্জারুল মালদা জেলার বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা মহসিন শেখের কাছ থেকে বেশ কিছু হেরোইন কেনে। সেই মাদক বাবদ মহসিন সেঞ্জারুলের কাছে সাড়ে চার লক্ষ টাকা পেত। বকেয়া টাকা নিয়ে দুই মাদক কারবারির মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। মহসিন জানিয়ে দেয়, ১ সেপ্টম্বরের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধ না করা হলে সেঞ্জারুলকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে।

প্রাণে বাঁচতে ধার্মিক বাবা মতিউরকে সেঞ্জারুল টোপ দেয় যে, মসজিদ বানাতে সরকার টাকা দিচ্ছে। ওই টাকা পেতে হলে বৈষ্ণবনগরে গিয়ে ফর্ম জমা করতে হবে। ছেলের কথামতো পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়ে ধর্মপ্রাণ মতিউর মসজিদের টাকা সংগ্রহ করতে বৈষ্ণবনগরে পৌঁছান। কৌশলে বাবাকে পাওনাদার মাদক কারবারিদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করানো হয়। লালগোলা থানার পুলিশ বিষয়টি টের পেয়ে চারদিন ধরে বৈষ্ণবনগরে ডেরা পাতে। গোটা চক্রকে প্রায় হাতের নাগালেই পেয়ে গিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেঞ্জারুল, মহসিন পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় মতিউরকে ।

এব্যাপারে মতিউরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, "কোনও ছেলে যে তার বাবাকে এভাবে জল্লাদের হাতে তুলে দিতে পারে তা আমার জানা নেই। সীমন্তে মাদক কারবার বন্ধ না হলে অনেক বাবাকেই আমার মতো কিডন্যাপ হতে হবে।" এব্যাপারে লালগোলা থানার ওসি বিপ্লব কর্মকার বলেন, "অভিযুক্তকে খুঁজে বের করা হবেই।" সোমবার মতিউরের জবানবন্দি নথিভুক্ত করতে পুলিশ তাঁকে লালবাগ আদালতে নিয়ে যায়।