মিস্ত্রির ছদ্মবেশে চুরি, ন’বছরের খুদের প্রচেষ্টায় প্রাণে বাঁচল গোটা পরিবার।


বনগাঁ:   মিস্ত্রির ছদ্মবেশে চুরি, ন'বছরের খুদের প্রচেষ্টায় প্রাণে বাঁচল গোটা পরিবার। তবে চোরের আক্রোশে গুরুতর জখম কাঠমিস্ত্রি। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বনগাঁ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার চড়কতলা এলাকার রায়পরিবারে।

জানা গিয়েছে, ফল ও পরিবহণ ব্যবসায়ী রাজকুমার রায় সম্পন্ন গৃহস্থ। ভাল ব্যবহারের জন্য বনগাঁ শহরে বিশেষ পরিচিত রয়েছে তাঁর। বেশ কিছুদিন ধরে বসতবাড়িতে নির্মাণের কাজ করাচ্ছেন রাজকুমারবাবু। এদিন কাঠ ও পাথর মিস্ত্রীরা বাড়িতে কাজ করছিলেন। সন্ধ্যাবেলা আচমকাই ঘটে ঘটনা। দোতলার কাচের দরজায় দমাদ্দম বাড়ি পড়তে থাকে। বারান্দায় বসে ভিডিও গেম খেলছিল রাজকুমারবাবুর নাতি সৌরদীপ। ক্রমাগত শব্দে দরজার দিকে তাকাতেই তার কেমন যেন সন্দেহ হয়। দৌঁড়ে পাশের ঘরে দিদাকে বিষয়টি বলতে যেতেই চোর সুযোগ বুঝে দরজা খুলে ঠাকুরঘরে চলে যায়। দোতলাতেই রয়েছে বাড়ির গৃহদেবতার মন্দির। বিগ্রহের গয়না চুরি উদ্দেশ্য ছিল চোরের। তবে সৌরদীপের উপস্থিত বুদ্ধির জেরে চোরের মনস্কামনা পূর্ণ হয়নি। চোর জানতো না যে দোতলার নজরদারি ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে সে। এদিকে মনিটরে ততক্ষণে চোরকে চিনে নিয়েছে ওই খুদে। দিদাকে চোরের মুখ দেখিয়ে দিয়েছে। বাড়িতে অস্ত্র হাতে চোর ঢুকেছে দেখেই চেচাঁমেচি শুরু করেন ওই প্রৌঢ়া। সঙ্গে সঙ্গে কাজ ফেলে ছুটে আসেন কাঠমিস্ত্রী অসীম বিশ্বাস। এদিকে ধরা পড়ার ভয়ে ঠাকুরঘরে চুরির কাজ ভুলে পালানোর পথ খুঁজছিল চোর। বিষয়টি অসীমাবাবুর নজরে পড়তেই তিনি চোরকে পাকড়াও করার চেষ্টা করেন। প্রাণ বাঁচাতে হাতে থাকা দা খানাই অসীমবাবুর ঘাড়ে বসিয়ে দেয় চোর। এরপর এলোপাথাড়ি কোপ। ততক্ষণে কাঠমিস্ত্রিরাও ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেছেন। এরপরেই টনক নড়ে চোরের। দা-য়ের ভয়ে সবাই তখন আতঙ্কিত। সেই সুযোগটাই কাজে লাগায় চোর, ছাদে উঠে উঠোনের গাছ বেয়ে পালিয়ে যায় সে।

এদিকে তড়িঘড়ি অসীম বিশ্বাসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসে বনগাঁ থানার পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে চোরকে শনাক্ত করা হয়। তারপর স্থানীয় গোপালনগর থানার পলতা থেকে চোর কুদ্দুস মণ্ডলকে হাতেনাতে গ্রপ্তার করেছে পুলিশ। গোটা ঘটনায় সৌরদীপকেই বাহবা দিচ্ছেন পড়শিরা। সে যদি সময়মতো ঠাকুমাকে বিষয়টি না জানাতো, তাহলে আরও বড়মাপের বিপদ ঘটতে পারতো। অন্যদিকে নজরদারি ক্যামেরার বদান্যতায় চোর ধরা পড়ায় স্বস্তির শ্বাস ফেলছে রায় পরিবার।