আধার-তথ্য কতটা সুরক্ষিত, সংশয় থাকছেই

আধার বাধ্যতামূলক কিনা তা নিয়ে জটিলতা কাটলেও, তথ্য সুরক্ষা নিয়ে সংশয় থেকেই গেল।

কেন্দ্র আজও শীর্ষ আদালতকে আশ্বস্ত করেছে, আধারের তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষিত। এতে সিঁদ কাটার কোনও উপায় নেই। অ্যার্টনি জেনারেল কে কে বেণুগোপালের দাবি, আধারের তথ্য ১৩ ফুট উঁচু ও পাঁচ ফুট মোটা দেওয়ালের চৌহদ্দিতে সুরক্ষিত। সরকারের সেই দাবি তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা আংশিক ভাবে মেনে নিয়ে বলছেন, মূল তথ্যভাণ্ডারের সুরক্ষা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু আধার সংক্রান্ত সার্বিক নেটওয়ার্কে কোনও ফাঁক থাকলে তথ্য ফাঁসের সম্ভবনা থেকে যায়। সে কারণেই ট্রাইয়ের চেয়ারম্যান আর এস শর্মার আধার নম্বর সর্বসমক্ষে আসে, কিংবা ঝাড়খণ্ডে আধারের ভিত্তিতে পেনশনপ্রাপকদের তালিকা হাতে হাতে ঘুরতে থাকে। জাতীয় তথ্য সুরক্ষা কাউন্সিলের অধিকর্তা বিনায়ক গডসের মতে, প্রায় প্রতিটি ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল সর্বদাই সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা যখন বৃহত্তর নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখনই সমস্যা দেখা যায়। তাই সামগ্রিক নেটওয়ার্কটি সুরক্ষিত করা জরুরি।

প্রশ্ন উঠেছে, টেলিকম ও ব্যাঙ্কের কাছে গ্রাহকদের আধার নম্বর রয়ে গেল— সেই তথ্যের ভবিষ্যত কী? এ নিয়ে আজ কোনও দিশা দেখায়নি আদালত বা সরকার। আধার কর্তৃপক্ষের (ইউআইডিএআই) মতে, আধার নম্বর কোনও গোপনীয় নম্বর নয়। তবে সর্বত্র তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা থাকা উচিত। কিন্তু ব্যাঙ্ক, মোবাইল তো বটেই, সরকারের চাপে বিমা থেকে হোটেল— সবক্ষেত্রেই মুড়ি-মুড়কির মতো যে ভাবে আধার ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে কোনও ব্যক্তির আধার নম্বর প্যান কার্ডের মতো স্থায়ী হওয়ায় ঝুঁকির পরিমাণ অনেক বেশি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

ঝুঁকি এড়াতে 'ভার্চুয়াল আইডি'-র মতো অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা হাতে নেয় ইউআইডিএআই। যেখানে কোনও ব্যক্তি আধার ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৬ সংখ্যার একটি অস্থায়ী সংখ্যা চাইতে পারেন। যা ১২ সংখ্যার স্থায়ী আধার নম্বরের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন তিনি। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াটি জটিল হওয়ায় এতে সাড়া মিলছে না। স্রেফ আধার কার্ডের ফটোকপি দিয়েই ঝামেলা এড়াচ্ছেন দেশের মানুষ। যা হাত ঘুরে ব্যবহার হচ্ছে অসৎ কাজে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি যদিও আজও দাবি করেছেন, ''আধারের সব তথ্য সুরক্ষিত।''

সংশয় রয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য নিয়েও। কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল দাবি করেন, লক্ষ-লক্ষ মানুষের বায়োমেট্রিক তথ্য বেসরকারি সংস্থার হাতে রয়ে গিয়েছে। যা চাইলে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। আধার কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছেন, বায়োমেট্রিক সংক্রান্ত খুব সামান্য তথ্য কার্ডের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। যা ফাঁস হলেও, কোনও ব্যক্তির পরিচয় জানা অসম্ভব। অতীতে ওই তথ্য ফাঁস নিয়ে ইউআইডিএআই-র সিইও অভয়ভূষণ পাণ্ডে দাবি করেছিলেন, বায়োমেট্রিক তথ্য ফাঁস কখনওই পাসওয়ার্ড ফাঁসের মতো গুরুতর সমস্যা নয়। বিশেষজ্ঞদের পাল্টা যুক্তি, পাসওয়ার্ড ফাঁস হলে তা পাল্টানো সম্ভব, বায়োমেট্রিক নয়। তাই তথ্য ফাঁস রুখতে খসড়া তথ্য সুরক্ষা আইনে সংশোধনীর দাবি তুলেছে কংগ্রেস।