‘ও কি জঙ্গি যে এ ভাবে গুলি করতে হল?’ আদিত্যনাথের কাছ জানতে চায় অ্যাপল কর্মী বিবেকের পরিবার



উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের জমানায় পুলিশের একের পর এক সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল আগেই। কিন্তু এ বার রুটিন তল্লাশির সময়ে গাড়ি না-থামানোয় গুলি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই হামলায় অ্যাপল সংস্থার 'এরিয়া ম্যানেজার' পদে থাকা বছর আটত্রিশের এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ। দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ। কিন্তু লখনউয়ে এমন ঘটনায় বড় অস্বস্তিতে পড়েছে যোগী সরকার। 

ঘটনার সূত্রপাত গত কাল গভীর রাতে। পুলিশ ও নিহত অ্যাপল কর্মী বিবেক তিওয়ারির পরিবার জানিয়েছে, গত কাল রাত দেড়টা নাগাদ এক মহিলা সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বিবেক। সেই সময়ে গোমতীনগর এক্সটেনশন এলাকায় রুটিন তল্লাশির দায়িত্বে ছিলেন কনস্টেবল প্রশান্ত চৌধুরি ও তাঁর এক সহকর্মী। বিবেকের খুনে অভিযুক্ত কনস্টেবল প্রশান্তের দাবি, ওই এলাকায় আলো নিভিয়ে দাঁড়িয়েছিল গাড়িটি। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁরা গাড়ির কাছে যান। তখনই গাড়ি স্টার্ট করেন বিবেক। প্রশান্তের কথায়, ''আমরা আমাদের মোটরবাইক গাড়ির সামনে রেখে সেটিকে আটকানোর চেষ্টা করি। কিন্তু উনি চলে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে বাইকে ধাক্কা মারেন।'' প্রশান্তের দাবি, তিনি এর পরেও থামতে ইঙ্গিত করেন। কিন্তু বিবেক তা-ও চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সময়ে বাইকে ধাক্কা লাগে। প্রশান্তের  দাবি, তিনি পড়েও যান। এর পরে বিবেক তাঁর উপর দিয়ে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করায় আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালান।

কিন্তু একেবারেই অন্য কথা শুনিয়েছেন বিবেকের সহকর্মী সানা খান। তাঁর দাবি, ''যাঁরা আমাদের থামাতে চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা যে কে, তা আমরা বুঝতেও পারিনি। আমি সঙ্গে ছিলাম বলে রাতে ওই এলাকায় আচমকা গাড়ি থামাতে রাজি হননি বিবেক স্যর। তাঁর গাড়ি বাইকে ধাক্কা মেরেছিল ঠিকই। কিন্তু ওই দু'জন তার আগেই বাইক থেকে নেমে পড়েছিলেন।'' সানার দাবি, এক জন হঠাৎই পিস্তল বার করে গুলি চালান। গুলি বিবেকের ঘাড়ে লাগলেও তিনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে গাড়িটি একটি লাইটপোস্টে ধাক্কা মারে। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ও পি সিংহের দাবি, দুই কনস্টেবল অপরাধ করেছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, পুলিশ থামতে বলা সত্ত্বেও বিবেক গাড়ি থামাননি। 


গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিবেকের গাড়ি।

বিবেকের স্ত্রী কল্পনা তিওয়ারির কথায়, ''আমার স্বামী অফিস থেকে বেরিয়ে আমাকে ফোন করে জানান, সহকর্মীকে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তার পরে আর ফোন ধরেননি। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উচিত এখানে এসে আমার সঙ্গে কথা বলা।'' বিবেকের কাকা তিলকরাজের মন্তব্য, ''আমি পুলিশে কাজ করেছি। খুব পরিকল্পিত ঘটনা ছাড়া এ ভাবে ঘাড়ে গুলি করা করা হয় না। যোগী জমানায় এমন ঘটনা খুব বেড়ে গিয়েছে।'' বিবেকের পরিবারের এক সদস্যের প্রশ্ন, ''ও কি জঙ্গি যে এ ভাবে গুলি করতে হল?''

ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা জানিয়ে দেন, এটা পুরোপুরি পুলিশ ম্যানুয়াল না মেনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ঘটনা। তাই দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা হয়েছে। সিবিআই তদন্ত, এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও পুলিশে চাকরি চেয়ে যোগীকে চিঠি লিখেছেন বিবেকের স্ত্রী কল্পনা। তাঁকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ দল গঠন করেছে পুলিশ। যোগীর মন্তব্য, ''এটা পুলিশি সংঘর্ষের ঘটনা নয়। প্রয়োজনে সিবিআই তদন্ত হবে।'' এক টুইটে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেছেন, ''উত্তরপ্রদেশ পুলিশ এখন কেবল গুলি চালাতেই অভ্যস্ত। মুখ্যমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে।'' 


নিহত অ্যাপল কর্মী বিবেক তিওয়ারির খুনে অভিযুক্ত কনস্টেবল প্রশান্ত চৌধুরি।

উত্তরপ্রদেশ পুলিশ অপরাধীদের শেষ করার নামে নিজেদের ইচ্ছেমতো সংঘর্ষ ঘটানো শুরু করেছে বলে দাবি বিরোধীদের। বিজেপি তথা প্রশাসনের একাংশের দাবি, অখিলেশ যাদবের আমলে কার্যত ঠুঁটো হয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তাই অপরাধ দমনে বড় অভিযান প্রয়োজন ছিল।