ঘুমন্ত নাবালিকাকে ধর্ষণে বাধা দিতে গিয়ে খুন হলেন নির্যাতিতার দাদু।

রায়গঞ্জ: করণদিঘিতে ঘুমন্ত নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ। অভিযোগ উঠল প্রতিবেশি যুবকের বিরুদ্ধে। ধর্ষণে বাধা দিতে গিয়ে খুন হলেন নির্যাতিতার দাদু। এই ঘটনায় অভিযুক্তের ছুরির কোপে গুরুতর আহত হয়েছেন নির্যাতিতার ঠাকুমা। ঘটনাস্থলে ছিল নির্যাতিতার ন'মাসের ভাই। সে-ও ঘটনার অভিঘাতে বোবা হয়ে গিয়েছে। তিনজনকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। এর জেরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে।

পুলিশ জানিয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ওই নাবালিকা নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিল। লাগোয়া দুটি ঘরের একটিতে দাদু ঠাকুমার সঙ্গে ছোট ভাই ও অন্য ঘরটিতে বাবা-মা ঘুমিয়েছিলেন। অভিযোগ, রাত একটার কিছু পরে প্রতিবেশী যুবক আলি শাহ (৩২) নাবালিকার ঘরে ঢোকে। ঘুমন্ত নাবালিকার উপরে নারকীয় অত্যাচার চালায়। আতঙ্কিত নির্যাতিতা কোনওরকমে অভিযুক্তের কবল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চিৎকার শুরু করে। নাতনির চিৎকারে ততক্ষণে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসেছেন দাদু  আরিফুল মণ্ডল (নাম পরিবর্তিত)। অভিযুক্তকে ধরতে যেতেই দাদুর গলায় ছুরি চালিয়ে দেয় আলি শাহ। স্বামীকে বাঁচাতে এসে আক্রান্ত হন ঠাকুমা রুবিনা বিবি (নাম পরিবর্তিত)। তাঁর পিঠে ও পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দেয় অভিযুক্ত। ততক্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন দাদু। এই দেখে চেঁচামেচি শুরু হলে পাশের ঘর থেকে নির্যাতিতার বাবা-মা ছুটে আসেন। বেগতিক বুঝে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। মণ্ডলবাড়ির চিৎকারে পড়শিরা ছুটে আসেন। তড়িঘড়ি তিনজনকেই হাসপাতালে নিয়ে গেলে ৭০ বছরের আরিফুল মণ্ডলকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।
 
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠাকুমার চিকিৎসা চলছে। তবে নির্যাতিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে, দাদুকে খুনের ঘটনা দেখে মানসিক স্থিতি হারিয়েছে ন'মাসের নাতি। তার অবস্থাও গুরুতর। গোটা ঘটনায় নির্যাতিতার পরিবারের তরফে এখনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে করণদিঘি থানার পুলিশ। পলাতক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পকসো আইনের আওতায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে খুনের মামলাও রুজু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের এসপি সুমিত কুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে খোঁজ চলছে। খুব শিগগির তাকে গ্রেপ্তারও করা হবে।

জানা গিয়েছে, করণদিঘির গর্দানকাটি গ্রামে নির্যাতিতার বাড়ি। ঠিক পাশের বাড়িতেই থাকে অভিযুক্ত আলি শাহ। নির্যাতিতার বাবা অটোচালক। তাঁর আক্ষেপ, প্রতিবেশী বেকার যুবককে আর্থিকভাবে সচ্ছল করার চেষ্টা করছিলেন। সেই কিনা তাঁর মেয়ের এতবড় সর্বনাশ করল। যদিও ছেলের সম্পর্কে কোনও তথ্যই দিতে পারেননি আলি শাহ-র বাবা মঞ্জুর রহমান। গোটা ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে।