যৌন সুবিধা দেওয়া-নেওয়া এখন ঘুষই

কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য যৌন সুবিধা চাওয়া এবং তা দিতে রাজি হওয়াও এখন থেকে ঘুষ বলে গণ্য হবে। নতুন যে 'দুর্নীতি নিরোধক (সংশোধনী) আইন-২০১৮' আনতে চলেছে সরকার, তাতে ঘুষ চাওয়া ও দেওয়া— দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধের আওতায় আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঘুষ বলতে শুধু আর আর্থিক লেনদেন নয়, যে কোনও অন্যায্য সুবিধা দেওয়া-নেওয়াকেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে যৌন সুবিধা চাওয়া ও তা দিতে রাজি হওয়ার বিষয়টিও থাকছে।

নতুন আইন প্রধানত ১৯৮৮-র চালু দুর্নীতি নিরোধক আইনেরই সংশোধিত রূপ। আগে সরকারি কর্মীরা এর আওতায় পড়তেন। তার পরে ২০১৩-য় এই আইনে সংশোধনী এনে বেসরকারি ক্ষেত্রকেও দুর্নীতি নিরোধক আইনের আওতায় আনা হয়। কেন্দ্রের এক উচ্চপদস্থ কর্তা রবিবার বলেন, ''সংশোধিত আইনে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বার থেকে যৌন সুবিধা নেওয়া, বিভিন্ন ক্লাবের দামি সদস্যপদ বা যে কোনও অন্যায় সুবিধা পাওয়ার জন্য পদস্থ কর্তাদের গ্রেফতার করতে পারবে।'' ওই কর্তা জানান, অন্যায় সুবিধার আওতায় প্রায় সব কিছুই থাকছে নয়া আইনে। যেমন দামি উপহার, ছুটি কাটানো, বিমানের টিকিট কেটে দেওয়া, পরিবার বা কাছের লোকের চাকরির ব্যবস্থা। এ ধরনের সুবিধা এ বার থেকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে চলেছে।

২০১৩-র সংশোধনীতেই দুর্নীতি নিরোধক আইনে সংশোধনী এনে 'আইনি পরামর্শের জন্য অর্থ নেওয়া' ছাড়া যে কোনও অন্যায্য সুবিধা নেওয়াকে ঘুষ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব এনেছিল কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক। ২০১৫-য় সে সংশোধনীর খসড়া খতিয়ে দেখে আইন কমিশন রিপোর্ট দেয়, উদ্দেশ্য ভাল হলেও আইনে 'ন্যায্য সুবিধা' ও 'অন্যায্য সুবিধা'র বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা দরকার। না হলে তদন্তকারী সংস্থা আইনের এই ফাঁক ব্যবহার করে মানুষকে হেনস্থা করতে পারে। তার পরেই সংশোধিত আইনে সেটি স্পষ্ট করা হয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পাওয়ার পরে সংশোধিত দুর্নীতি নিরোধক আইনটি আনার বিষয়ে জুলাইয়ের শেষে নোটিফিকেশন করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জি বেঙ্কটেশ রাও জানান, সংশোধিত আইনে কার্যত যে কোনও রকম বাড়তি সুবিধা পাওয়াকেই 'অন্যায্য সুবিধা'-র আওতায় নিয়ে এসে তাকে ঘুষের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জের দুর্নীতি-বিরোধী প্রস্তাবে যে কোনও অন্যায্য সুবিধা আদায়কেই ঘুষ বলে গণ্য করার কথা বলা হয়েছিল। ২০১১-য় ভারত সেই প্রস্তাব সংসদে অনুমোদন করে। তার পরেই বিষয়টি প্রচলিত দুর্নীতি নিরোধক আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রাওয়ের কথায়, তবে 'অন্যায্য সুবিধা'-র বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করাটা খুবই দরকার ছিল। এতে অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া আদালতের পক্ষেও সহজ হবে। আইন বিশেষজ্ঞ সিমরনজিৎ সিংহ তার পরেও তদন্তকারী সংস্থার হেনস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ''যত সমস্যা অন্যায্য সুবিধার ব্যাখ্যা নিয়ে। জনস্বার্থে সংশোধিত আইনে এ নিয়ে বিন্দুমাত্র অস্বচ্ছতা থাকা ঠিক নয়।''