এবার পানশালা খুলে মদ বিক্রি করবে রাজ্য সরকার

দোকান, পানশালা খুলে এবার দেশি, বিলাতি ও বিদেশি মদ বিক্রি করবে রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারি সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট বেভারেজেস কর্পোরেশন লিমিটেড (বেভকো)-কে মদের দোকান, পানশালা খোলার নতুন লাইসেন্স দেওয়া হবে। রাজ্য অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে এ জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি (নম্বর- ১৩০৭-এফটি, তারিখ- ১২.০৯.২০১৮) ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রসঙ্গত, মদের দোকান খোলার জন্য নতুন লাইসেন্স দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার ১৩ বছর পরে নিল। এর আগে ২০০৫ সালে তৎকালীন বাম সরকারের আমলে লটারির মাধ্যমে সারা রাজ্যে ১,৪০০ নতুন বিলাতি মদের দোকান খোলার জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। রাজ্য সরকার আগেই বেভকোর মাধ্যমে মদের পাইকারি ব্যবসার পুরোটা হাতে নিয়েছে। তবে, খুচরো মদ ব্যবসায় সরকারের প্রবেশ করার এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
কারণ, মদের দোকান, পানশালা থেকে লভ্যাংশ বাবদ সরকারের বাড়তি রোজগার হবে, যা সরকারি কোষাগার ভরাতে সাহায্য করবে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এর ফলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সরকারি কোষাগারে ন্যূনতম ১০,০০০ কোটি টাকা বাড়তি আসার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কোথায় বেভকো নতুন বিলাতি মদের দোকান, পানশালা খুলবে? সরকারি এক কর্তার জবাব, 'বর্তমানে রাজ্যে আবগারি জেলার সংখ্যা ২৮। দু'একটি জেলা ব্যতীত সব জায়গাতেই বেভকোর গুদাম, অফিস রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওই জেলাগুলিতেই নতুন দোকান, পানশালা খোলার জন্য জায়গা খুঁজবে বেভকো। এ ব্যাপারে প্রধানত জোর দেওয়া হবে পর্যটন কেন্দ্রগুলির উপর।' বেভকো-র পরিকল্পনা অনুযায়ী, আপাতত সারা রাজ্যে হাজার খানেক নতুন মদের দোকান, পানশালার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য উপযুক্ত জায়গা খোঁজা হবে। বর্তমানে সারা রাজ্যে বিলাতি মদের দোকান ও পানশালা রয়েছে প্রায় ৫,৩০০। সেগুলি যেমন চলছে, তেমনই থাকবে বলে সরকারি ওই কর্তা জানিয়েছেন।

যদিও রাজ্যে বিলাতি মদের দোকানমালিকদের একাংশের আশঙ্কা, বেভকো নতুন দোকান খোলার পর একবার সাফল্যের মুখ দেখলে বাকি মদের দোকানগুলির লাইসেন্স সরকার পুনর্নবীকরণ না-ও করতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যে মদের পাইকারি ব্যবসার মতো খুচরো বিক্রিতেও সরকারের একচেটিয়া কায়েম হবে। যদিও বেভকো পাইকারি ব্যবসায় আসার আগে রাজ্যে যে ২৫০-টির মতো বিলাতি মদের হোলসেলার সংস্থা ছিল, তারা তাদের অফিস বা গুদাম চত্বরে একটি করে নতুন মদের দোকান খুলতে পারবে। তাদের শুধুমাত্র ফি দিয়ে লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে অর্থ দপ্তরের তরফে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি (নম্বর- ১৩০৯-এফটি, তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮) প্রকাশিত হয়েছে। এই আড়াইশোর মতো হোলসেলারদের অধিকাংশই বৃহত্তর কলকাতায়। 

ফলে, কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় নতুন প্রায় ১৫০টির মতো মদের দোকান অচিরেই চালু হতে পারে, যাদের মালিক হবে একদা হোলসেলার সংস্থাগুলি। জিএসটি চালু হওয়ার পর রাজ্য সরকারের নিজস্ব রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আবগারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত অর্থ বছরে সরকারের আবগারি রাজস্ব বাবদ আয় হয়েছিল ৮,৭০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের জন্য রাজ্য বাজেটে লক্ষ্য রাখা হয়েছে ১০,৫০৩ কোটি টাকা। সেই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে চলতি অর্থ বছরের সাড়ে পাঁচ মাসের মধ্যেই ৫,৫০০ কোটি টাকার কাছাকাছি আবগারি রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি--- এই পাঁচ মাসে যেহেতু গোটা বছরের রাজস্বের ৬০-৬৫ শতাংশ আদায় হয়, তাই ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের শেষে আবগারি রাজস্ব খাতে সরকারের আয় ১৪,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছে আবগারি দপ্তর। আর তার সঙ্গে নতুন দোকান ও পানশালা বাবদ বেভকো-র লভ্যাংশ ধরা হলে তা আরও অন্তত ১,০০০ কোটি টাকা বেশি হবে, এমনই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।