পাহাড়ে আবার ফিরছে পুজো

সুবাস ঘিসিংয়ের শিলা পুজোর ফতোয়া কবেই উঠে গিয়েছে। দুর্গাপুজো নিয়ে বিমল গুরুংয়ের অনুগামীদের ভ্রুকুটিও আর নেই। গত বছর পৃথক রাজ্যের আন্দোলন দমনে পুলিশি সক্রিয়তার জেরে গুরুং গা-ঢাকা দেওয়ার পর তাঁর অনুচরদেরও আর দেখা মেলে না। পাহাড়ে এ বছর তাই ফের জমিয়ে দুর্গাপুজোর আয়োজন হতে চলেছে বলে শিলিগুড়ির কুমোরটুলিতে আভাস মিলছে। দীর্ঘদিন পর পাহাড় থেকে প্রতিমা তৈরির বরাত আসছে ভালোই। একটা সময়ে পুজোয় শিলিগুড়ির কুমোরটুলির ভরসা ছিল পাহাড়ই।

অন্তত দু'হাজার প্রতিমা পাহাড়ে যেত। দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের চেয়ারম্যান সুবাস ঘিসিং মূর্তিপুজো বন্ধ করে শিলা পুজোর ডাক দেওয়ার পর পাহাড়ে দুর্গাপুজোর সংখ্যাই কমে গিয়েছিল। পরে বিমল গুরুংয়ের আমলে তাঁর অনুচরদের দৌরাত্ম্যে পুজো আয়োজনের ভরসা পেতেন না সাধারণ মানুষ। এ বার কিন্তু ফের পাহাড়ের নানা প্রান্তে দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।বরাত আসার পাশাপাশি অনেক শিল্পী আবার ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে। সেখানেই প্রতিমায় রঙ করে বিক্রি হবে। প্রায় এক দশক পরে এ বার পাহাড়ে বুকিং খুব ভালো বলে পর্যটন সংস্থা ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস সূত্রে জানামো হয়েছে, পুজোকে পর্যটনে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। পাহাড়ে বেড়াতে এসে অষ্টমীর অঞ্জলী কোথায় দেওয়া সম্ভব, তার তালিকা পর্যটকদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। 
পর্যটন সংস্থাটির সম্পাদক সন্দীপন মণ্ডল বলেন, 'এ বছর পাহাড়ে পুজোয় পর্যটকদের প্রচুর ভিড় হবে। বুকিং হার বেশ ভালো। দুর্গাপুজোয় পর্যটন আকর্ষণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি আমরা।' পাহাড়ে বেশি সংখ্যায় পুজোর আয়োজনের কারণ, বাঙালিদের পাশাপাশি হিন্দু নেপালি সম্প্রদায়ের উদ্যোগ। বাঙালিরা যেমন ষষ্ঠীতে বোধন করে দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন দেন, হিন্দু নেপালিদের অবশ্য মহালয়া থেকেই পুজো শুরু হয়।দীপাবলী পর্যন্ত চলে। গত বছর পাহাড়ে অশান্তির জেরে সেই উৎসবে ছেদ পড়েছিল। এ বারের পরিস্থিতি যে অন্য রকম, সেটা শিলিগুড়ির কুমোরটুলিতে গেলেই স্পষ্ট হচ্ছে। শিলিগুড়ি কুমোরটুলির সভাপতি অধীর পাল বলেন, 'এ বার তো শুনছি, অনেকেই পাহাড়ে ক্যাম্প করে প্রতিমা গড়ছেন। একটা সময়ে পাহাড়ে অন্তত হাজার দু'য়েক প্রতিমা যেত।' 

ঘিসিংয়ের শিলা পুজোর ফতোয়ায় শিলিগুড়ির কুমোরটুলির বহু প্রবীণ শিল্পী ফাইবারের মূর্তি তৈরিতে নেমে পড়েছিলেন। তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন কৃষ্ণনগর-সহ দক্ষিণবঙ্গের নানা প্রান্তের শিল্পীরা।পুজোর ঐতিহ্যে পাহাড়ে বাঙালি প্রতিষ্ঠানগুলিই এগিয়ে। শতবর্ষ প্রাচীন কার্শিয়াংয়ের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম উদ্যোক্তা অলকা দে বলেছেন, 'আমাদের পুজোর ঐতিহ্যই আলাদা। গত বছর অ্যাসোসিয়েশন পুজো না-করার পরিকল্পনা করায় কার্শিয়াংয়ের সাধারণ মানুষ পুজোর আয়োজনে নেমে পড়েছিলেন।' দার্জিলিংয়ের বাঙালি প্রতিষ্ঠান হিন্দু মিলন মন্দিরের সঙ্গে এখনও জড়িয়ে বর্ধমান মহারাজাদের পরিবার। দার্জিলিংয়ের অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও শতবর্ষ প্রাচীন এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।