অভিনব ধাঁচে এটিএম প্রতারণা, জালে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার

হাতে বড় মাপের মাস্টার-কি। লক্ষ্য, অরক্ষিত এটিএম কাউন্টার। অপারেশনের জন্য বরাদ্দ সময় আধঘণ্টা। মেশিন থেকে নিমেষে হাপিস ২০০০ টাকার বাকেট।সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে চলা এটিএম কেলেঙ্কারির ঘটনায় নবতম সংযোজন এই পদ্ধতি। দিল্লি, পাটনা, ওডিশায় সফল হয়েছিল এই অপারেশন। সেখান থেকে এ রাজ্যের বহরমপুর ঘুরে প্রতারণা চক্রের এক সদস্য উত্তর চব্বিশ পরগনার নোয়াপাড়ায় ঢুকে প্রতারণার 'কাজ' শেষ করেই ধরা পড়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের হাতে। ধৃত পাণ্ডার নাম আম্মার আলি খান।

আদতে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। আদতে দিল্লির বাসিন্দা হলেও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাটনা থেকে। বেশ কিছুদিন জেল খাটার পরে শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে আম্মারের জামিনের জন্য আবেদন জানানো হয়। তবে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন নামঞ্জুর করে দিয়েছেন। এই মামলার সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় আদালতে বলেন, 'এ ক্ষেত্রে যে ধরনের প্রতারণা করা হয়েছে, তা বিরল এবং অত্যাধুনিক। একজন অভিযুক্ত ধরা পড়তেই এই অপরাধ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে অভিযুক্ত বাইরে এলে এই কাজ আবার শুরু হতে পারে।'কী ভাবে ঘটছিল অপরাধ? পুলিশ সূত্রে খবর, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আম্মার এটিএম মেশিনের ইতিহাস-ভূগোল সবই জানে। 
কোনও শহরে অপারেশন চালাতে গেলে প্রথমে একটি গাড়ি ভাড়া করে রক্ষীহীন এটিএম কাউন্টার খুঁজে বের করা হত। তারপরে মাস্টার কি কিনে আম্মার ঢুকে পড়ত কাউন্টারে। দ্রুত খুলে ফেলা হত মেশিনের একটি অংশ। তারপরে ইউএসবি কোড দিয়ে 'কনফিগার' করে ফেলা হত মেশিনটি। ভিতরে পেন ড্রাইভ গুঁজে দিলেই ওই মেশিন মূল সার্ভার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। এরপরে মেশিন থেকে কিউআর কোড নিয়ে পাঠানো হত নাইজেরিয়ায় থাকা এই চক্রের এক সদস্যের কাছে। সেই সদস্য আবার মিনিট ১৫-র মধ্যে তা ডিকোড করে পাল্টা এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিত কোন বাকেটে রাখা রয়েছে ২ হাজার টাকা। আম্মার সেই নির্দেশ আসামাত্র মূল মেশিন থেকে বাকেট বের করে টাকা হাতানো হত। অন্য কোনও টাকার দিতে নজরই দিত না প্রতারকেরা। 'অপারেশন' শেষ হত আধঘণ্টায়। 

বেশি সময় লাগলে আবার কাউন্টারে গ্রাহক চলে আসার ভয়।বহরমপুরের মধুবন নামে একটি জায়গায় সে কারণে ধরাও পড়ে যাচ্ছিল তারা। তবে নোয়াপাড়ার দু'টি কাউন্টার থেকে পর পর ২২ লক্ষ এবং সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা তোলার পরে টনক নড়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এই বিষয়গুলি দেখার দায়িত্ব ছিল টাটা সংস্থার উপরে। খোঁজখবর করে তারা দেখতে পায় এটিএম থেকে দিন দিন ব্যালান্স কমে যাচ্ছে, কিন্তু হিসেব মেলানো যাচ্ছে না। খবর যায় পুলিশে।কী ভাবে এদের চিহ্নিত করা গেল? তদন্তকারীদের বক্তব্য, যে এটিএমগুলি থেকে এই প্রতারণা হচ্ছিল, ঘটনার দিন সেখানে ব্যবহার করা ফোনগুলির উপরে টাওয়ার ডাম্পিং টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। এতে এক অভিযুক্তের আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরের হদিস মেলে। তার উপরে নজরদারি চালাতে গিয়ে দেখা যায়, ব্যাঙ্ক প্রতারণার টাকা দিয়ে আম্মার একটি গাড়িও কিনে নিয়েছে। ওই টাকার একটা অংশ আবার বিটকয়েনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করে তারা। দীর্ঘদিন তক্কে তক্কে থেকে শেষে সূত্র মারফত খবর পেয়ে পাটনা থেকে আম্মারকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার শাগরেদ কমলাকান্ত ওডিশার ভদ্রকে পালিয়ে যায়। পুলিশ এই চক্রের বাকি সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।