বিশ্বনাথন আনন্দকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার দাবি উঠল

কলকাতা: ভারতরত্ন পুরস্কার অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল শচীন তেন্ডুলকরকে। তারপর এই তালিকায় আগে ও পরে কোনও ক্রীড়াবিদ নেই। দেশের 'সর্বোচ্চ সিভিলিয়ান অ্যাওয়ার্ড' কেন পাবেন না ভারতের সর্বকালের অন্যতম সফল ক্রীড়াবিদ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দ? শনিবার কলকাতার এক অভিজাত হোটেলে টাটা স্টিল চেস টুর্নামেন্টের সাংবাদিক সম্মেলনের মঞ্চে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন ভারতীয় দাবা ফেডারেশনের সচিব ভারত সিং চৌহান। এর আগে হকি জাদুকর ধ্যানচাঁদকে ভারতরত্ন পুরস্কার দেওয়ার দাবি উঠেছে। এই প্রস্তাব শুনে এদিন অর্থবহ হাসি ঝিলিক দিল আনন্দের মুখে!
ভারতে এখন ৫৪জন গ্র্যান্ডমাস্টার। একশোর মতো আন্তর্জাতিক মাস্টার। ফিডের তালিকায় সেরা দাবা খেলিয়ে দেশ হিসেবে ভারত একনম্বরে রয়েছে। তবুও ওলিম্পিকসে অংশ নেওয়া থেকে বঞ্চিত এদেশের দাবাড়ুরা। বিশ্বনাথন আনন্দ এই প্রসঙ্গে বললেন, 'আশা করছি, একসময় দাবাকে ওলিম্পিকসে দেখতে পাব। তবে আমাদের তো চেস ওলিম্পিয়াড রয়েছে। কিন্তু ওলিম্পিকসের মাহাত্ম্য অন্যরকম।' আগামী ৯ থেকে ১৪ নভেম্বর কলকাতার হো চি মিন সরণির ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন (আইসিসিআর) হলে অনুষ্ঠিত হবে টাটা স্টিল চেস র‌্যাপিড ও ব্লিৎজ টুর্নামেন্ট। ভারতে এর আগে এত উচ্চমানের দাবা টুর্নামেন্ট হয়নি। আনন্দ এই প্রতিযোগিতার আকর্ষণ। ভারতীয় 'দাবা'র ভিশি তাঁর প্রিয় এই শহরে নিজের সেরাটা দিতে মুখিয়ে রয়েছেন। ৩২ বছর পর কলকাতায় খেলতে চলেছেন আনন্দ। এই প্রসঙ্গে আনন্দ বললেন, '১৯৮৬ সালে আমার জীবনের প্রথম জিএম টুর্নামেন্ট খেলতে কলকাতায় এসেছিলাম। সেটাও ছিল টাটা স্টিল ইভেন্ট। তখন আমি ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার। আবার এই শহরে খেলতে নামার আগে একটা আলাদা অনুভূতি হচ্ছে!' প্রতিযোগিতার মোট পুরস্কার মূল্য ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা)। ১৯৮৮ সালে জি এম নর্ম পাওয়া আনন্দের এখন এলো রেটিং ২৭৭১। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে রয়েছেন ১১ নম্বরে। টাটা স্টিল দাবায় বিশ্বের অন্যতম সেরা ১১ জন দাবাড়ু খেলবেন। যাদের মধ্যে তিনজনের এলো রেটিং ২৮০০ প্লাস। এরমধ্যে রয়েছেন বিশ্বের তিন নম্বর ও আজারবাইজানের জিএম শাখরিয়র মামেদিয়ারভ, আর্মেনিয়ার জি এম ও বিশ্বের ছ'নম্বর লেভন অ্যারোনিয়ন, বিশ্বের ন'নম্বর আমেরিকার ওয়েসলে সো, বিশ্বের ১৪ নম্বর জাপানি বংশোদ্ভুত আমেরিকার চার বারের চ্যাম্পিয়ন হিকারু নাকামুরা, বিশ্বের ১৫ নম্বর রাশিয়ান জিএম সের্গেই কার্জাকিন ছাড়াও খেলবেন ভারতের হরিকৃষ্ণ, সূর্যশেখর গাঙ্গুলি, বিদিত গুজরাটি, নিহাল সারিন ও রমেশ বাবু প্রজ্ঞানন্দ। শেষের জন সর্বকনিষ্ঠ। বয়স ১২ বছর ১০ মাস। ৪৮ বছর বয়সী বিশ্বনাথন আনন্দ বলছেন, 'এই টুর্নামেন্টে খেলার আগে বেশ উত্তেজনা অনুভব করছি। আশা করছি, টাটা স্টিল চেসের মাধ্যমে এই পূর্বাঞ্চলের দাবার প্রসারন ঘটবে।' গত মে থেকেই একেবারে ভালো ফর্মে নেই আনন্দ। গত আগস্টে শেষ খেলেছেন আমেরিকার সেন্ট লুইসে সিঙ্কফিল্ড কাপ। ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার ১০ দাবাড়ুর মধ্যে অপরাজিত থেকে ছ'নম্বরে শেষ করেন। নভেম্বরে রয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। কতটা ভালো ফল আশা করেন? আনন্দ বলছেন, 'বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ দাবাড়ুর ফর্ম ওঠানামা করছে। আমিও এই তালিকার বাইরে নই। তবে আপাতত লক্ষ্য চেস ওলিম্পিয়াডে ভালো ফল করা। তবে আমি দাবা উপভোগ করছি। যতদিন পারব নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।'৪৩তম চেস ওলিম্পিয়াড ২৩ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে জর্জিয়ার বাতুমিতে। ২০০৬ সালের পর আবার এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেবেন আনন্দ।

টাটা স্টিল চেস সিঙ্গল রাউন্ড রবিন র‌্যাপিড টুর্নামেন্ট। প্রতিযোগিতায় শেষ দু'দিন হবে ডাবল রাউন্ড ব্লিৎজ। দাবার র‌্যাপিড ও ব্লিৎজ হল ক্রিকেটে ফিফটি-ফিফটি ও টি-টোয়েন্টি ওভার ফর‌ম্যাটের মতো। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়া। তাঁর পাশেই ছিলেন বর্তমানে বাংলার তারকা দাবাড়ু সুর্যশেখর গাঙ্গুলি। সেকেন্ড হিসেবে সুর্যর তুখোড় বুদ্ধি ও উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রশংসা করেন আনন্দ। চেন্নাইয়ের দাবাড়ুর মনে দাগ কেটে রয়েছেন বিশ্বের কিংবদন্তী দুই দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভ ও আনাতোলি কারপভ। এই প্রসঙ্গে আনন্দ বলেন, 'যখন দাবা খেলা শুরু করেছিলাম, তখন কারপভকে নকল করতাম। পরে কাসপারভ আমার কাছে আকর্ষণ হয়ে ওঠে। ওঁর উদ্ভাবনী প্রয়োগ, ভ্যারিয়েশন, দাবার বোর্ডে আক্রমণাত্মক মেজাজ প্রশংসনীয়। আনাতোলি কারপভের পরবর্তী সংস্করণ ম্যাগনাস কার্লসেন।'

দাবার বাইরে ফুটবল প্রিয় আনন্দের। ভক্ত রিয়াল মাদ্রিদের। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো চলে গেলেও রিয়ালের খেলা ফলো করি। জুভেন্তাসের খেলা দেখি না। রিয়াল ছাড়ার পর জুভেন্তাসে তো সেইভাবে রোনাল্ডোকে চোখে পড়ছে না।'