ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হিমাচল, লাহুল-স্ফীতিতে নিখোঁজ আইআইটি-র ৪৫ ছাত্র


ভরা বর্ষার মরসুমের মধ্যে হিমাচলের সবচেয়ে দুর্গম এলাকা লাহুল-স্ফীতিতে ট্রেক করতে গিয়েছিল একদল ছাত্র। কিন্তু, দিন কয়েক ধরে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আইআইটি রুরকি-র ছাত্র এই ৩৫ জন লাহুল-স্ফীতির হামতা পাস থেকে ট্রেক শুরু করেছিলেন। ২৬ কিলোমিটার ট্রেকের শেষে তাঁদের সোমবারের মধ্যে মানালি পৌঁছনোর কথা ছিল।

হিমাচলের একটা অংশ প্রবল বৃষ্টি আর ধসে বিধ্বস্ত। ঠিক তখনই ১৪ হাজার ফুট উপরে থাকা লাহুল-স্ফীতি জেলাতেও শুরু হয়েছে প্রবল তুষারপাত। যার জেরে লাহুল-স্ফীতির বিভিন্ন অংশে ১৪৫ জন পর্যটক রাস্তার মধ্যে আটকে আছেন। এদের উদ্ধার করতে জেসিবি মেশিন দিয়ে রাস্তায় জমে থাকা বরফ পরিস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু, লাহুল-স্ফীতি জেলার আশি শতাংশ জায়গায় রাস্তা বলে কিছুই নেই। হিমালয়ের কোল ঘেঁষে একটা সাইট দিয়ে বড় বড় বোল্ডার বিছিয়ে রাস্তা তৈরি করা রয়েছে। এর উপর দিয়েই পর্যটক ভর্তি গাড়ি ছুটে যায়। মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুটের চওড়া এই রাস্তার একটা ধার ধরে নেমে গিয়েছে অন্তত কয়েক হাজার ফিট খাত। শুখা মরসুমে এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে হিমশিম অবস্থা হয়। সেখানে বরফ পড়লে সহজেই অনুমেয় কতটা ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। 
 
জানা গিয়েছে, আইআইটি রুরকি-র ৩৫ জনের দলটির সঙ্গে খোঁজ মিলছে না আরও ১০ জনের। এরাও ট্রেক করতে গিয়েছিল লাহুল-স্ফীতিতে। হামতা পাস ট্রেক মাত্র ২৬ কিলোমিটারের হলেও এইি ট্রেকিং-রুট সম্পূর্ণ করতে ৬ দিন লেগে যায়। কারণ হামতা পাসের উচ্চতা এবং অক্সিজেনের অভাব। যার ফলে চার-পাঁচ কদমেই ট্রেকে অনভ্যস্তদের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। বারবার বিশ্রাম নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়।

নিখোঁজ ছাত্রদের মধ্যে একজনের বাবা রণবীর সিং জানিয়েছেন, সোমবারই তাঁর ছেলের মানালি পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এইি গ্রুপের কারও-র সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। 

এদিকে, কুল্লু, কাঙ্গরা এবং ছাম্বা জেলায় প্রবল বৃষ্টি চলছে। এর জেরে এই তিন জেলায় ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ধসে জখম হয়েছেন বহু মানুষ। কুল্লুতেই মারা গিয়েছেন ৪জন। মৃতদের মধ্যে এক বালিকাও রয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

কাঙ্গরার নাহাদ খাদ নদির জলে একজন ভেসে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। হড়পা বানে তলিয়ে গিয়েছে বহু ঘর-বাড়ি। বিয়াস নদির জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের নদির কাছে এবং পাহাড়ের গা-বেয়ে নেমে আসা নালা-র ধারেকাছে যেতে বারণ করেছেন হিমাচলের বনমন্ত্রী গোবিন্দ সিং। কুল্লুতে ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে হাই-অ্যালার্ট। দুর্যোগে এরই মধ্যে ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। কুল্লুতে সবধরণের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস, প্যারাগ্লাইডিং আপাতত বাতিল করা হয়েছে। হামিরপুর, কাঙ্গরা ও কুল্লু-তে সব সরকারি ও প্রাইভেট স্কুল এবং কলেজ সোমবার থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।