যৌনতার হাতছানি দিয়ে শিলিগুড়ি থেকে চলত দেশজুড়ে প্রতারণা

ধৃত সন্দীপ মিত্র ও নীতা শংকর

শিলিগুড়ি : কলকাতা ও শিলিগুড়িতে গড়ে উঠেছিল সেক্স ডেটিং ক্লাব। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কুড়িটি শাখার জন্য ম্যানেজার ও HR ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়েছিল। শিলিগুড়িতে চলত ১২টি ক্লাব, কলকাতায় ছিল আরও আটটি। পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মহিলা টেলিকলার নিয়োগ করে লোক ঠকানোই ছিল এদের মূল ব্যবসা। হাওড়ার বাসিন্দা দেবাশিস মুখার্জির এই কাণ্ড দেখে হতবাক হায়দরাবাদ পুলিশ।


যৌনসঙ্গীর খোঁজে প্রতারিত হন হায়দরাবাদের বাসিন্দা এম শরৎবাবু। ২০ জুলাই হায়দরাবাদের স্থানীয় থানার সাইবার ক্রাইম সেলে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দিনকয়েক আগে শিলিগুড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শিলিগুড়ির ওই সেক্স ডেটিং ক্লাবের ১২টি ব্র্যাঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র ম্যানেজার ও কলকাতার বাসিন্দা সন্দীপ মিত্র। এছাড়া গ্রেপ্তার করা হয় নীতা শংকর নামে শিলিগুড়ির এক বাসিন্দাকেও। ওই মহিলা ক্লাবের একটি ব্র্যাঞ্চের ম্যানেজার ছিলেন।

হায়দরাবাদের পুলিশের বক্তব্য, শিলিগুড়ির হাকিমপাড়া এলাকায় বেশ কিছুদিন আগে গোপনে গজিয়ে উঠেছিল সেক্স ডেটিং ক্লাবের অফিসটি। খোলা হয়েছিল ডেটিং ওয়েবসাইট যার নাম "গেট ইয়োর লেডি ডট কম"। কলকাতা ও শিলিগুড়িতে খোলা হয় ক্লাবের ২০টি ব্র্য়াঞ্চ অফিস। অফিসের টেলিকলার মহিলা কর্মীদের কাজ ছিল যৌনতার লোভ দেখিয়ে বিত্তশালীদের থেকে অর্থ লুটে নেওয়া। আর সেটাই হত। 

হায়দরাবাদের DCP ক্রাইম জানকি শর্মিলা আজ বলেন, "আমাদের কাছে যে ব্যক্তি অভিযোগ করেছিলেন, তিনি প্রতারিত হয়ে ১৬ লাখ টাকা খুইয়েছেন। আমদের ধারণা দীর্ঘদিন ধরে একাধিক বিত্তশালীকে প্রতারণা করেছে এরা। লুটে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা।"

হায়দরাবাদের SCP (সাইবার ক্রাইম সেল) শ্রীনিবাস বলেন, "নথিপত্র, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে অন্য প্রতারিতদের খোঁজ করে প্রতারণার মোট অর্থের পরিমাণ জানার চেষ্টা চলছে।"

হায়দরাবাদ পুলিশের বক্তব্য, ওই ফ্যান ক্লাবের তরফে ভিন রাজ্যর ব্যক্তিদের মোবাইলে মেসেজ পাঠানো হত। যেখানে লেখা থাকত "আপনি কি একা ? মনের মতো সঙ্গী চাই যৌনতা উপভোগে !" এই মেসেজ দেখে কেউ আগ্রহ দেখালেই কাজে নামতেন প্রশিক্ষিত টেলিকলাররা। কথার জাদুতে ফাঁসিয়ে মেম্বারশিপ ফি ছাড়াও দফায় দফায় নানা ফি-র নামে নেওয়া হত টাকা। এমনকী দিতে হত GST অর্থাৎ পরিষেবা কর। এমনই একটি মেসেজ দেখে ফাঁদে পড়েছিলেন হায়দরাবাদের বাসিন্দা এম শরৎবাবু।

রেজিস্ট্রেশনের পরেই শরৎবাবুর সঙ্গে ফ্যান ক্লাবের তরফে যোগাযোগ করানো হয় রিয়া নামে এক যুবতির। যোগাযোগ করানো হয় ফোনের মাধ্যমে। এরপর থেকে ফোনের মাধ্যমেই চলত কথাবার্তা। দিনে প্রায় সাত-আট ঘণ্টা কথা বলত ওই যুবতি। আর এই কথা বলার সুবাদে দফায় দফায় তাঁকে মোট ১৬ লাখ টাকা দিতে হয় ফ্যান ক্লাবকে। কথা ছিল এক মাস বাদেই সামনাসামনি দেখা করবে রিয়া। যদিও টাকা জমা দেওয়ার পরও সামনে আসেনি রিয়া। এরপরেই প্রতারণার মামলা দায়ের করেন তিনি। অভিযোগ পেয়ে ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বরের সূত্র ধরে হায়দরাবাদ সাইবার ক্রাইম থানার পুলিশ জানতে পারে ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি কলকাতার। এবং সেটি চালানো হত শিলিগুড়ি থেকেই। 

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরে শিলিগুড়ি এসে পৌঁছায় তদন্তকারী অফিসাররা। এরপর শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় সন্দীপ মিত্র সহ নীতা শংকর নামে এক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয় হাকিমপাড়ার ওই ব্রাঞ্চ অফিস থেকে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই হইচই শুরু হয়েছে হায়দরাবাদ জুড়ে। খোঁজ চলছে বাকি তিন অভিযুক্ত দেবাশিস মুখার্জি, ফইজুল হক ওরফে বিকি এবং অনিতা দে ওরফে তানিশার।