বাবা–মায়ের সঙ্গে বিড়ি বেঁধে ডব্লিউবিসিএসে সফল


ফরাক্কা: বাবা–মা বিড়ি শ্রমিক। অভাবের সংসার। পড়াশোনা চালাতে বাবা–মায়ের সঙ্গে বিড়ি বেঁধে ডব্লিইবিসিএস পরীক্ষায় ১৪তম স্থান অধিকার করে তাক লাগিয়ে দিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার প্রত্যন্ত সামসেরগঞ্জ ব্লকের যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দা সামিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রেজাল্ট প্রকাশিত হওয়ার পর সেই খবর যাদবনগরে ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় খুশির বন্যা বয়ে যায়। শনিবার সামিরুল বাড়ি ফিরতেই প্রতিবেশী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তঁাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের অন্যতম পিছিয়ে পড়া ব্লক সামসেরগঞ্জের যাদবনগর গ্রামের বাসিন্দা তাসিরুদ্দিন শেখ। গ্রামে গ্রামে চাল বিক্রি করে এবং বাড়িতে বিড়ি বেঁধেই সংসার চালান তিনি। স্ত্রী জাহানারা বিবিও বিড়ি শ্রমিক। তাসিরুদ্দিন তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে অভাবের মধ্যে সংসার নির্বাহ করলেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিয়ে কোনও রকম আপস করেননি। নিজেরা অশিক্ষিত হলেও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আঙিনায় পৌছে দিতে সদা তৎপর তাসিরুদ্দিন ও জাহানারা বিবি। বড় ছেলে সামিরুল ইসলামকে বড় অফিসার বানানোর নেশায় অষ্টম শ্রেণিতেই একটি মিশনে ভর্তি করেন। কিন্তু টাকার অভাবে বছর খানেকের মধ্যে বাড়ি চলে আসতে হয় সামিরুলকে। সংসারের আয় বাড়াতে বাড়িতে মা–বাবার সঙ্গে তিনি বিড়ি বাঁধতে থাকেন। সঙ্গে চলে নিরলস পড়াশোনা। এভাবেই পঞ্চগ্রাম হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। তারপর রহমতে আলম মিশনে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। বারাসত কলেজ থেকে  ২০১৩ সালে প্রথম বিভাগে স্নাতক হন। তারপর থেকেই ডব্লিইবিসিএস–এর প্রস্তুতি চলতে থাকে। পরের বছরই বিসিএস–এ পাস করে রেভিনিউ অফিসার পদে চোপড়া ব্লকে যোগ দেন সামিরুল। এখানেই থেমে থাকেননি। তারপরেও অদম্য জেদ নিয়ে পড়াশোনা। চলতে থাকে বিসিএসের প্রস্তুতিও। ফের ২০১৭ সালে পরীক্ষায় বসেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেই পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোতেই দেখা যায় সামিরুল রাজ্যে জেনারেল তালিকায় ১৪তম স্থান অধিকার করেছেন। যার জন্য বরাদ্দ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদ। ট্রেনিং সম্পন্ন হলেই কিছুদিন পর ব্লক ডেভলপমেন্ট অফিসার পদে যোগ দেবেন তিনি। সামিরুলের সাফল্যের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। নিজের রেজাল্ট নিয়ে বলতে গিয়ে সামিরুল ইসলাম বলেন, '‌খুব কষ্ট করে বাবা–মায়ের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত বিড়ি বঁাধার কাজ ও তার সঙ্গে পড়াশুনো করে আজ এই জায়গায় এসেছি। পিছিয়ে পড়া এলাকা থেকে আমার এই সাফল্যে খুব গর্বিত মনে হচ্ছে।'‌ তিনি আরও জানান, বিড়ি শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি অধ্যুষিত এলাকা থেকে সাধারণত ছাত্রছাত্রীরা সিভিল সার্ভিসে পরীক্ষায় এগিয়ে আসেন না। কিন্তু যঁারা সাহস করে এগিয়ে আসেন, তঁারাই সফল হন। এলাকার ছাত্রছাত্রীদের সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিসিএস–এর কোচিং ফ্রিতে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি। তঁার এই সাফল্যের পিছনে বাবা–মা ও রহমতে আলম মিশনের অবদান রয়েছে বলে জানালেন সামিরুল। এদিকে, ছেলের এমন রেজাল্টে চোখে জল আসে মা জাহানারা বিবি ও বাবা তাসিরুদ্দিন শেখের। জাহানারা বিবি বলেন, '‌বিড়ি বেঁধে কষ্ট করে একবেলা না খেয়ে ছেলেকে স্কুলে পড়িয়েছি। ছেলের রেজাল্টে আমরা খুব খুশি।'‌