পাকিস্তানকে ভিতু ভিতু দেখাচ্ছে, মত আক্রমের


চেহারাটা এখনও চাবুকের মতোই আছে। চওড়া কাঁধের মানুষটাকে দেখে মনে হয়, এখনও বল হাতে নেমে পড়লে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানের ঘুম ছুটিয়ে দিতে পারবেন।

সেই কাজটা অনেকবারই তিনি করেছেন পাকিস্তানের জার্সিতে। আর এখন মাঠের বাইরে বসে ওয়াসিম আক্রমকে দেখতে হচ্ছে তাঁর দেশের আত্মসমর্পণ। ''পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখে মনে হচ্ছে, ওরা ভয় পেয়ে খেলছে। ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাট করতে নামছে ওদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ওরা ঘাবড়ে আছে,'' সোমবার দুবাইয়ে টি-টেন লিগের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে সাংবাদিকদের বলছিলেন আক্রম। 

তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এত ভাল খেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এশিয়া কাপে কেন এত বিশ্রী হাল হল? আক্রমের জবাব, ''আপনারা কেন বার বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা বলছেন, আমি জানি না। ও তো বছর দেড়েক আগে হয়ে গিয়েছে। এখন দেখতে হবে, বর্তমানে কী রকম খেলছে দল। যা মোটেই ভাল নয়।''

কিন্তু কেন পাকিস্তানের এত খারাপ অবস্থা? আক্রমের ব্যাখ্যা, ''ছেলেদের মধ্যে দক্ষতার অভাব নেই। কিন্তু ওদের শরীরী ভাষা আমার একদমই ভাল লাগছে না। ভিতু ভিতু, ঘাবড়ানো। মুখ দেখেই মনে হচ্ছে, প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে। গ্লাভসে বল লাগছে, তাও আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিচ্ছে (রবিবার ফখর জামানের আউট প্রসঙ্গে)। আর ব্যাটসম্যান রিভিউ নিচ্ছে না। উল্টো দিকের ব্যাটসম্যানও কিছু বলছে না। এ সবই ঘটছে, কারণ, দলটা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে।''

ভারতের বিরুদ্ধে পরপর দুটো ম্যাচে হার যে সে-ই চাপ প্রচুর বাড়িয়ে দেবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই আক্রমের। ভারতীয় দলটাও যে পাকিস্তানের থেকে অনেক এগিয়ে, সেটাও বলেছেন আক্রম। তাঁর মন্তব্য, ''এখানে যেন একটা দলই খেলছে। ভারত অনেক এগিয়ে পাকিস্তানের থেকে। এই ভাবে এক তরফা ম্যাচ হারাটা সত্যিই হতাশাজনক।''

ভারতের যশপ্রীত বুমরার বোলিং খুব ভাল লেগেছে আক্রমের। বলছিলেন, ''এখন এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যুগে ভাল ইয়র্কার দেওয়ার বোলার কোথায় বলুন তো? এখন তো নাকল বল, স্লোয়ার বাউন্সার এ সব উঠে এসেছে। এক মাত্র ভারতের যশপ্রীত বুমরাকে দেখলাম, ভাল ইয়র্কার দিচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে ওর হাত থেকে বেশ কয়েকটা ইয়র্কার বেরোল।'' 

ভারত যে তাঁদের থেকে অনেক এগিয়ে, সেটা স্বীকার করেছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদও। রবিবার ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পরে তিনি বলেছেন, ''আমাদের থেকে ভারতীয় ক্রিকেটারদের দক্ষতা অনেক বেশি। আমরা ওদের সমমানের নেই।'' সরফরাজের এই নেতিবাচক বিবৃতি নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট বিতর্ক শুরু হয়েছে পাকিস্তানে। পাক সংবাদমাধ্যমের কয়েক জনের কাছ থেকে জানা গেল, দেশে ইতিমধ্যেই রব উঠেছে, সরফরাজকে এখনই অধিনায়ক পদ থেকে ছেঁটে ফেলে দেশে ফিরিয়ে আনা হোক।

সুপার ফোরে বুধবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিততে না পারলে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় হয়ে যাবে পাকিস্তানের। যে ম্যাচ নিয়ে আক্রম বলছেন, ''বাংলাদেশ যথেষ্ট ভাল দল। পাকিস্তানের পক্ষে ম্যাচটা সহজ হবে না। সে-ই ম্যাচ জিতলে তো ফাইনালে আবার ভারত। তবে আমাদের হাতে যে ক্রিকেটাররা আছে, তাদের নিয়েই লড়তে হবে। পাকিস্তানে তো কোনও ডন ব্র্যাডম্যান বসে নেই, যে এসে জিতিয়ে দিয়ে যাবে। ছেলেদের একটা কথাই বলব। ফলের কথা না ভেবে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেল।'' 

দুবাইয়ের স্থানীয় টি-টোয়েন্টি লিগে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ হয়ে এসেছেন আক্রম। আইপিএলের অংশ না নিতে পারাটা কি আপনাকে কষ্ট দেয়? বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার বললেন, ''শুধু আইপিএল নয়, ভারতে আমার প্রচুর বন্ধু আছে। তাদের অভাব টের পাই। তিন বছর হয়ে গেল যোগাযোগ নেই। তা ছাড়া কলকাতাকে মিস করি, কেকেআরের কথা খুব মনে পড়ে। আশা করব, এক দিন আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।'' 

ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর প্রাক্তন অধিনায়ককে নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী আক্রম। কোনও রকম বিতর্কিত বিষয়ে না ঢুকে পাকিস্তানের এই কিংবদন্তি বলেছেন, ''ইমরানকে একটু সময় দিতে হবে।''

দুবাইয়ের যে টি-টেন লিগের সঙ্গে তিনি যুক্ত হয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পাকিস্তান বোর্ডের চেয়ারম্যান এহসান মানি। লিগ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না পেলে তিনি পাক ক্রিকেটারদের এই লিগে খেলতে দিতে চান না। অন্য দিকে, আইসিসি বলেছে, তারা এই সব গজিয়ে ওঠা নতুন লিগগুলোর ওপর নজর রাখবে। এই অবস্থায় কেন তিনি এই লিগে অংশ নিচ্ছেন? আক্রমের জবাব, ''আমি পাকিস্তান বোর্ডে চাকরি করি না। আমি পেশাদার কোচ। যারা আমার সঙ্গে চুক্তি করবে, আমি তাদের হয়েই কাজ করব। আর আইসিসির উদ্বেগ নিয়ে বলছেন? সেটা নিয়ে আপনারা এই লিগের সংগঠকদের প্রশ্ন করুন। আমরা পেশাদার ক্রিকেটার আর কোচ, আমরা এখানে নিজেদের কাজটা করতে এসেছি, ব্যস।''