ট্রেন বন্ধ, হাওড়ায় পরীক্ষার্থী-বিক্ষোভ


জঙ্গলমহলে রেল অবরোধের জেরে সোমবার হাওড়া স্টেশনেও চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। রেলের চাকরির পরীক্ষায় তাঁরা আদৌ বসতে পারবেন কি না, তা জানতে চেয়ে রাতে স্টেশনের অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ দেখান কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। বাড়ি ফিরতে না-পেরে স্টেশনে রাত কাটান অসংখ্য মানুষ।

সকাল থেকে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ শুরু করে জনজাতি সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগনা। হাওড়া থেকে ছাড়া ট্রেনগুলি খড়্গপুর ও আদ্রা ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে আটকে যায়। দুপুরের পরে হাওড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দূরপাল্লার কোনও ট্রেনই ছাড়তে পারেনি। হাওড়া-মুম্বই সিএসটি মেল, হাওড়া-যশবন্তপুর, হাওড়া-পুণে আজ়াদ হিন্দ, হাওড়া-পুরী ধৌলি, রূপসী বাংলা, আরণ্যক এক্সপ্রেস-সহ বহু ট্রেন বাতিল হয়। আজ, মঙ্গলবার হাওড়া-মুম্বই দুরন্ত এক্সপ্রেস-সহ দূরপাল্লার কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানোর ব্যবস্থা হয়েছে। এ দিন হলদিয়া, মেচেদা, বালিচক পর্যন্ত কিছু লোকাল ট্রেন চললেও ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার কোনও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বা ইএমইউ ট্রেন ছাড়া সম্ভব হয়নি।

সোমেশ আদক নামে বাউড়িয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ''রাত ৯টা ১০ মিনিটের পরে ১০টা ২৫ মিনিটে একটি পাঁশকুড়া লোকালের কথা ঘোষণা করা হয়। মাঝখানে খড়্গপুর ও মেচেদা লোকাল বাতিল করা হয়। শেষ পর্যন্ত যদিও বা একটা ট্রেন ছাড়ল, তাতে ভিড়ের চাপে দমবন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।'' মৈত্রেয়ী সাহা নামে এক মহিলা বলেন, ''ভাবলাম, বাস ধরব। কিন্তু স্টেশনের বাইরে গিয়ে দেখি, রানিহাটি, পাঁচলার কোনও বাসই নেই। মওকা বুঝে অস্বাভাবিক ভাড়া হাঁকছে ট্যাক্সি। তা-ও তারা যাবে ধুলাগড় পর্যন্ত। কয়েক জন নিরুপায় হয়ে তাতেই চড়লেন।'' কী ভাবে বাড়ি ফিরবেন, সেই চিন্তায় উদ্বিগ্ন মুখে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। ভিড়ের দরুন রাতের দিকে স্টেশন-চত্বরে খাবার ও জলের সঙ্কট দেখা দেয় বলে অভিযোগ।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে রাতে অবরোধ তোলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী অবরোধ ওঠেনি, ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক হয়নি। ফল যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। পরীক্ষায় বসতে না-পারার আশঙ্কায় উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বহু চাকরিপ্রার্থী। অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা নিয়োগ পরীক্ষা চলছে রেলের। আজ, মঙ্গল এবং কাল, বুধবারেও পরীক্ষা আছে। যাঁদের সেই পরীক্ষা দেওয়ার কথা, তাঁরা ভুবনেশ্বরের ট্রেন ধরতে এসে দেখেন, সব বন্ধ। বেশি রাতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে পরীক্ষার্থীদের। অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভে শামিল হন কয়েক হাজার পরীক্ষার্থী। তাঁদের প্রশ্ন, ট্রেন কখন ছাড়বে? তাঁরা ঠিক সময়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারবেন কি? না-পারলে কী হবে?

রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড (কলকাতা)-এর চেয়ারম্যান সঞ্জয় বিশ্বাস জানান, অবরোধের জন্য যাঁরা পরীক্ষা দিতে পারছেন না, তাঁদের ফের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে। পরীক্ষার পরিবর্তিত দিনক্ষণ জানা যাবে ১৬ অক্টোবরের পরে।