দিনে দর্জি, রাতে সিরিয়াল কিলার, ভয়ঙ্কর খুনিকে ধরলেন এশিয়ান গেমসে পদক জয়ী জুডো প্লেয়ার


দেখে বোঝার উপায় নেই। দিব্যি লোকটা সকাল থেকে দোকান খুলে দর্জিগিরির কাজ করে যেত। নিপাট ভদ্র মানুষ বলেই সকলে চেনে তাকে। কিন্তু এই লোকটা-ই যে একটা সিরিয়াল কিলার তা কেউ কখনও জানতে পারেনি। সকলে তার খুনি পরিচয় সামনে আসে যখন আদেশ খামরাকে পুলিশ গ্রেফতার করে, তারপরে। আদেশ খামরা নামে এই দর্জির বিরুদ্ধে এক একটি নয় ৩৩টি খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। ভয়ানক এই খুনিকে গান-পয়েন্টে রেখে গ্রেফতার করেন এশিয়ান গেমসে জুডো-তে ব্রোঞ্জ জয়ী মহিলা খেলোয়াড় বিট্টু শর্মা। বর্তমানে মধ্যপ্রদেশ পুলিশে পুলিশ সুপার পদে কর্মরত তিনি।

ভোপালের এক ঘিঞ্জি এলাকায় একটা ছোট টেলারিং-এর দোকান চালাত আদেশ। কিন্তু রাত হলেই কাঁধে কুড়ুল চাপিয়ে নেমে পড়ত খুনের নেশায়। আর তার প্রতিটি খুনেরই শিকার ট্রাক চালক এবং তাঁদের খালাসিরা। জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে অমরাবতীতে প্রথম খুন করে আদেশ। এরপর নাসিকেও সে এক ট্রাক চালককে খুন করেছে বলে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের দাবি।

গত কয়েক বছর ধরেই এমন ৩০টি খুনের কেসে নাজেহাল হয়ে যায় মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। এই ঘটনায় খুন হওয়ারা সকলেই ছিল ট্রাক চালক। তদন্তে পুলিশ এটাও বুঝতে পারে খুন গুলো এক ব্যক্তিরই করা। মধ্যপ্রদেশের যেখানে যেখানে এই খুনের ধারার সঙ্গে মিল থাকা হত্যাকাণ্ড নথিভুক্ত হয়েছিল পুলিশ সেই ফাইলগুলোকে পুনরায় খোলে। কারণ, এই সব খুনের সন তারিখ দেখে পুলিশ বুঝতে পেরেছিল এটা কোনও সিরিয়াল কিলারের কাজ এবং সে এখনও এই এলাকার মধ্যেই রয়েছে। সুতরাং তাকে অতি শীঘ্র ধরা না গেলে খুনের সংখ্যা আরও বাড়বে। জানা গিয়েছে বিহার ও উত্তর প্রদেশে গিয়েও ট্রাক চালকদের খুন করে এসেছে আদেশ।

ভোপাল পুলিশের এলিকাতে সম্প্রতি দুই ট্রাক চালক খুন হন। সেই ঘটনারই তদন্তে নেমে পুলিশ বেশকিছু সূত্র পায়। আর তার ভিত্তিতে বাকি খুনের মামলাগুলির ফাইল খোলা হয়। এসপি লোধা রাহুল কুমারের নেতৃত্বে এক তদন্তকারী দল তৈরি হয়। যাতে ছিলেন এসপি পদমর্যাদার অফিসার তথা এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী মহিলা প্লেয়ার বিট্টু শর্মা।

তদন্তেই যাবতীয় দিক পুলিশকে আদেশ খামরার টেলারিং শপ-এর দিকে নিয়ে যায়। আদেশের উপর নজরও রাখা হতে শুরু করে। পুলিশ পিছনে লেগেছে দেখে আদেশ সুলতানপুর জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু পুলিশ জয়করণ নামে আদেশের এক সঙ্গীকে খুঁজে পায়। জয়করণ নিজে খুন না করলেও সে আদেশের সঙ্গে থাকত। জয়করণের দাবি সা নাকি বারবারই আদেশকে জিজ্ঞেস করে এসেছে এই সব খুনের অর্থ কী? জবাবে, আদেশ নাকি বলেছিল, 'ট্রাক চালক ও খালাসিদের জীবন খুব কষ্ঠের, তাই ওদের মুক্তি দিচ্ছি।'

আদেশের খোঁজে পুলিশ সুলতানপুর জঙ্গলে ঢোকে। সেখানেই এসপি বিট্টু শর্মা প্রায় কিলোমিটার খানেক চেজ করে আদেশকে গ্রেফতার করেন। আদেশকে গান-পয়েন্টে নিয়ে নিয়েছিলেন বিট্টু সামান্য এদিক-ওদিক হলেই যে গুলিতে মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যাবে তা বুঝতে পেরেছিল আদেশ। তদন্ত দলের প্রধান এসপি লোধা রাহুল কুমার জানিয়েছন, এই ধরণের ঘটনা একজন পুলিশ অফিসারের জীবনে একটাই আসে। ৩৩টি খুনের আসামীকে ধরতে পেরে তিনি খুব খুশি।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা প্রথমে ৩০টি সিরিয়াল কিলিং নিয়ে আদেশকে জেরা শুরু করেছিলেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেই জানায় আরও ৩টি খুন সে করেছে। এরা ছিল ট্রাকের খালাসি।
কয়েক বছর আগেই এই ভোপালের বুক থেকেই এক সিরিয়াল কিলারকে ধরেছিল বীরভূম পুলিশ। উদয়ন দাস নামে প্রবাসী এক বাঙালি যুবক বীরভূমে বাড়ি গার্লফ্রেন্ডকে খুন করে তাঁকে নিজের ঘরে কবর দিয়ে রেখেছিল। এমনকী নিজের বাবা-মা-কেও খুন করেছিল উদয়ন। সেই সিরিয়াল কিলিং-এর ঘটনা ভোপালে চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছিল।

এবার যে সিরিয়াল কিলারকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই আদেশ-এর স্ত্রী, পুত্র ও মেয়ে হতবাক। তারা জানিয়েছে, খুনের ব্যাপার ও আদেশের গ্রেফতারি তাঁরা নাকি সংবাদপত্রের মাধ্যমেই জেনেছেন। আদেশ যে খুন করে থাকতে পারেন তা তাঁরা কিছুতেই মানতে পারছেন না। আদেশের মধ্যে কোনও অসুস্থ মানসিকতার লক্ষণও তাঁরা পাননি।