বারাসতের স্কুল থেকে হারিয়ে গেল পাঁচ বছরের পড়ুয়া, দেহ মিলল পুকুরে


শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে শুরু করে স্কুলের কর্মীরা সবাই ব্যস্ত অনুষ্ঠান নিয়ে। তারই মাঝে সকলের অলক্ষ্যে স্কুল থেকে বেরিয়ে পড়ল পাঁচ বছরের শিশু। তার পর সেই শিশুর প্রাণহীন দেহ উদ্ধার হল স্কুল থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরে! ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের একটি বেসরকারি কিন্ডার গার্ডেনে।

অন্য দিনের মতোই শুক্রবার মায়ের সঙ্গে স্কুলে গিয়েছিল পাঁচ বছরের অর্কাভ সাহা। জন্ম থেকেই কথায় কিছু আড়ষ্টতা ছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, অর্কাভর মানসিক বৃদ্ধির কিছু সমস্যা আছে। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শেই বারাসত নবপল্লির উদ্দীপন অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করেন ছেলেকে বাবা-মা।

শুক্রবার দুপুরে অর্কাভকে স্কুলে আনতে যান তার মা। গিয়ে দেখেন, অর্কাভকে খোঁজাখুঁজি করছে স্কুলের শিক্ষিকারাও। তার পর তিনি জানতে পারেন, ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুলের কেউই জবাব দিতে পারছেন না, কী ভাবে বন্ধ দরজা পেরিয়ে, সকলের নজর এড়িয়ে পাঁচ বছরের অর্কাভ বাইরে গেল! তত ক্ষণে স্কুলের আশপাশের কয়েক জনের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে কিছু ক্ষণ আগেই স্কুলের সামনের রাস্তায় দেখেছেন তাঁরা।

কিছু ক্ষণ খোঁজখুঁজির পরেই স্কুলের সামনের একটি পুকুর থেকে অর্কাভর প্রাণহীন দেহ উদ্ধার করেন স্থানীয় যুবকরা। এর পরেই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকেরা।

নবপল্লির একটি তিনতলা বাড়ির একতলা ভাড়া নিয়ে বছরখানেক আগে এই স্কুলটি চালু হয়। বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। তাদের নিয়ে এ দিন স্কুলে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের ফাঁকেই অর্কাভ কী করে বাইরে গেল তাই নিয়েই প্রশ্ন।

কণিকা ভৌমিক, ওই স্কুলেরই উল্টো দিকে থাকেন। তিনি বলেন, "স্কুলে কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। দু'জন পরিচারিকা আছেন। কিন্তু তাঁরা গেটে থাকেন না।" গেটে কোনও নজরদারি না থাকায় সকলের চোখের আড়ালে অর্কাভ বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে অভিযোগ তাঁর অভিভাবকদের। স্কুল থেকে খানিক দূরেই পিঙ্কি বণিক-এর স্টেশনারি দোকান। তিনি বলেন, "আমি বাচ্চাটাকে দেখেছি। রাস্তায় ঘুরছিল। কিন্তু বুঝতে পারিনি ওই স্কুলের বাচ্চা। পরে যখন সবাই খোঁজ শুরু করে তখন জানতে পারি। শিশুটি আমার দোকানের সামনের রাস্তা দিয়েই পুকুরের দিকে গিয়েছিল।"

স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে ঘটনার পর কেউ মুখ খোলেননি। তবে, স্কুলের নাচের শিক্ষিকা দীপমালা মুখোপাধ্যায় অবশ্য স্বীকার করে নেন স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি। তিনি বলেন, "আমরা সব সময়েই বাচ্চাদের খেয়াল রাখি। আজ অনুষ্ঠানের ফাঁকে কী ভাবে বাইরে গেল সেটা সত্যিই আমরা বুঝতে পারছি না। আমাদের অসাবধানতাবশত হয়তো স্কুলের মূল গেট খোলা ছিল। সেটা দিয়েই ও বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে।"

অর্কাভর পরিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বারাসত থানাতে অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।