‘সুইসাইড নোট’ লিখে খুন, যাবজ্জীবন প্রেমিকা ও তার দাদার

গৌরব মণ্ডল ও তপতী

'সুইসাইড নোট' লিখে ফেলেছিল ছেলেটি। তাতে বলে গিয়েছিল, প্রেমিকা, তার দাদা এবং আরও দু'জনের জন্য সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। আত্মহত্যা অবশ্য করতে হয়নি। তার আগেই প্রেমিকা আর তার দাদা কীটনাশক খাইয়ে, মারধর করে মেরে ফেলে ছেলেটিকে। 'সুইসাইড নোট' উদ্ধার হয় পলাশ চক্রবর্তী নামে বছর সতেরোর ছেলেটির মৃত্যুর পরে।

গাইঘাটার ওই ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে তরুণী ও তার দাদার। শনিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক-২)  অসীমকুমার দেবনাথ ওই নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ জানায়,  সাজাপ্রাপ্তদের নাম গৌরব মণ্ডল ও তপতী মণ্ডল। বাড়ি গাইঘাটার দেবীপুরে। পলাশও থাকত সেখানেই। ঘটনাটি ২০১০ সালের ১৫ জুলাইয়ের। মামলার সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানিয়েছেন, পলাশের সঙ্গে তপতীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তপতী তখন গোবরডাঙা হিন্দু কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বয়স আঠারো।

চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবিথী স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে পড়ত পলাশ। পুলিশ জানিয়েছে, বছর তিনেক ধরে পলাশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল তপতীর। ওই তরুণীর দাদার সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রে তাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল পলাশের। সেই সূত্রেই এক বছরের বড় তপতীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। ইতিমধ্যে, তপতী প্রেমে পড়ে দাদার এক বন্ধুর সঙ্গে। কথাবার্তা বিয়ে পর্যন্ত গ়ড়ায়। পলাশের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।

তা মেনে নিতে পারেনি ছেলেটি। তা নিয়ে শুরু হয় টানাপড়েন। গৌরবও চায়নি পলাশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখুক বোন। পথেঘাটে সে পলাশকে হুমকি দিতে থাকে। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকে সতেরো বছরের ছেলে পলাশ। সে সময়েই সুইসাইড নোটে তপতী, তার দাদা এবং আরও দু'জনের নাম লেখে সে। ইতিমধ্যে 'পথের কাঁটা' পলাশকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে ফেলে প্রেমিকা আর তার দাদা। ঘটনার দিন  তপতী পলাশকে  ডেকে পাঠায়। নিয়ে যায় গোবরডাঙার জামদানি এলাকায় রেল লাইনের কাছে যায়। সেখানে ছিল গৌরব। মদের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাওয়ানো হয় পলাশকে। মারধরও করা হয়। পলাশ পাশের একটি বাড়িতে ছুটে পালায়। ওই বাড়ির এক যুবক তাকে গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতাল নিয়ে যান। সেখান থেকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই পলাশের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ধরা পড়ে ভাইবোন। হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে এত দিন বাইরে ছিল।  
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর সে সময়ে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করেন। সংগঠনের পক্ষে নন্দদুলাল দাস বলেন, ''এই রায়ে আমরা খুশি।''