কোপ পড়বে সুবিধায়! এ বার কি মুখ্যমন্ত্রী আধার লিঙ্ক করাবেন?


জেদের বশে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে আধার সংযুক্তিকরণে 'না' বলে দিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বুধবারের নির্দেশের পরে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় চলা সব প্রকল্পেই আধার যোগ করতে হবে। বিভিন্ন দফতরের আশঙ্কা, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের পরে কেন্দ্র যদি আধার সংযুক্তিকরণ ছাড়া কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা বা বিভিন্ন ভাতা দিতে রাজি না-হয়, তা হলে মোটা টাকা হারাতে পারে রাজ্য। 

তবে নবান্নের একাংশের আশা, এত দিন শীর্ষ আদালতে আধার মামলা বিচারাধীন ছিল। ফলে কেন্দ্রীয় নির্দেশ মানতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতা ছিল না। এ বার শীর্ষ কর্তারা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সব চেয়ে বেশি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চলে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে। ১০০ দিনের কাজ থেকে গ্রামীণ আবাস, বার্ধক্য ভাতা থেকে পরিবার সহায়তা প্রকল্পের ক্ষেত্রে উপভোক্তাদের নাম নথিভুক্ত করে সরাসরি টাকা পাঠায় কেন্দ্র। যেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উপভোক্তা আছেন, সেখানেই আধার সংযুক্তির নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি। তা মানা হয়নি।

পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, কেন্দ্র বাধ্যতামূলক করার পরেও রাজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধার যোগ করেনি। তবে স্বেচ্ছায় যাঁরা আধার নম্বর দিয়ে সুবিধা নিতে চেয়েছেন, তাঁদের আটকানো হয়নি। সরকারি হিসেব বলছে, এখন ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে এক কোটি ৩৮ লক্ষ লোক যুক্ত আছেন। তাঁদের মধ্যে ৮৩ লক্ষের মজুরি দেওয়া হয় আধার নম্বরের ভিত্তিতে শনাক্ত করা অ্যাকাউন্টে। পাশাপাশি আধার নম্বর দিয়ে শনাক্ত করতে না-পারায় প্রায় ৬১ হাজার কাজ-প্রাপকের অ্যাকাউন্ট বাতিলও করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও আধার মিলিয়ে ঘর দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ রাজ্যে ছ'লক্ষ আট হাজার ঘর-প্রাপক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চার লক্ষ ৬৩ হাজার উপভোক্তা স্বেচ্ছায় আধার যোগ করেছেন। যদিও ৯৩ হাজার উপভোক্তার আধার নম্বরের সঙ্গে বাকি সব কিছু মিলিয়ে দেখা হয়েছে। গোলমাল ধরা পড়ায় আধার-যোগ হয়নি প্রায় ৪০ হাজার উপভোক্তার। বার্ধক্য ভাতা প্রাপকের সংখ্যাও এ রাজ্যে প্রায় ২২ লক্ষ। কিন্তু তাঁদের সকলের আধার সংযুক্তি হয়নি বলেই পঞ্চায়েত দফতর সূত্রের খবর।

পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ''মুখ্যমন্ত্রী বিদেশ থেকে ফিরলে এই বিষয়ে আলোচনা করব। একটা কিছু সিদ্ধান্ত তো নিতেই হবে।'' পঞ্চায়েতের পাশাপাশি জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশন, প্রাণিসম্পদ বিকাশ উন্নয়ন দফতরেও বিভিন্ন প্রকল্পে আধার-সংযুক্তি প্রয়োজন। রাজ্য এখনও রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার-যোগ ঘটায়নি। এ বার সেই কাজ করতে হবে। রাজ্যের ১১ কোটি বাসিন্দার মধ্যে প্রায় সাড়ে আট কোটি মানুষ দু'টাকা দরে চাল পেয়ে থাকেন। এখন সকলের রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার যোগ করতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ''নবান্নে মতামত চেয়ে ফাইল পাঠাব। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রীই।''

কেন্দ্রের বক্তব্য, এখনও পর্যন্ত যত আধার সংযুক্তি হয়েছে, তার ফলে প্রচুর ভুয়ো উপভোক্তা বাদ পড়েছেন। এবং তাতে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। পশ্চিমবঙ্গেও আগে থেকে সংযুক্তির কাজটা করা গেলে বহু ভুয়ো উপভোক্তার খোঁজ মিলত। বাঁচানো যেত টাকা।