১৯৬৮ সালে এ দেশে চাকরি পেয়েও ‘বিদেশি’! অসমে আত্মঘাতী বাঙালি


সব নথিপত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও এনআরসির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম ওঠেনি তাঁর। উপরন্তু 'ঘোষিত বিদেশি' হিসেবে নোটিস পেয়ে চরম মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। শেষ পর্যন্ত মনের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেলেন অসমের দরং জেলার খারুপেটিয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা আইনজীবী নীরদবরণ দাস। গত কাল নিজের ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন নীরদবাবু।

পুলিশ তাঁর জামার পকেট থেকে এনআরসি সেবাকেন্দ্রের দেওয়া নোটিস ও সুইসাইড নোটটি উদ্ধার করেছে। মৃত্যুর জন্য পরিবারের কেউ দায়ী নয়— লিখে পাঁচ ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকার ধার শোধ করার জন্য ওই সুইসাইড নোটে স্ত্রীকে অনুরোধ করে গিয়েছেন তিনি। তাঁর পরিবারের দাবি, ১৯৭১ সালের আগের সব প্রমাণপত্রই আছে। স্থানীয় শৈলবালা স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে নীরদবাবু গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পরে নিজের স্কুলেই শিক্ষকতায় যোগ দেন। ৩৪ বছর পরে ২০১২ সালে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকে মঙ্গলদৈ আদালতে আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস করছিলেন। কিন্তু নিজে উকিল হয়েও সকলের প্রিয় 'নীরদ স্যার' এনআরসির তালিকায় নাম তুলতে না পেরে ও বিদেশি হিসেবে নোটিস পাওয়ায় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

এ দিন নীরদবাবুর মৃতদেহ আটকে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের দাবি, বাঙালি বলেই তাঁর নাম বাদ পড়েছে। সব প্রমাণপত্র থাকা সত্ত্বেও দরং জেলায় বহু বাঙালির নামই বাদ গিয়েছে। জেলাশাসক অশোক বর্মন ও এসপি টি শ্রীজিৎ ঘটনাস্থলে এসে পূর্ণ তদন্তের আশ্বাস দেন। প্রতিশ্রুতি দেন, নীরদবাবুকে বিদেশি সাজানোয় এনআরসি কেন্দ্রের কেউ জড়িত থাকলে তার সাজা হবে। প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদার বলেন, "বিজেপি সরকারের আমলেই এত জন বাঙালির নাম বাদ পড়েছে। দায় এড়াতে পারে না তারা।'' জেলাভিত্তিক কোন গোষ্ঠীর কত জনের নাম বাদ পড়েছে, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান তিনি।