"ট্রেন ধাক্কা মারতেই দেহগুলো উড়ে যাচ্ছিল"


অমৃতসর : ছেলের কাটা মুণ্ডর ছবি নিয়ে এদিক-ওদিক দৌড়াচ্ছিলেন বিজয় কুমার। সবাইকে বলছিলেন, "এটা আমার ছেলে। মনীশ। এর শরীরটা দেখেছেন ? আমি পাচ্ছি না।" শত খুঁজেও পাননি ছেলের অর্ধেক দেহ। হয়তো বা পরে পাবেন। হয়তো পাবেন না। তবে, বিজয় কুমার আফশোস করছেন, "কেন দশেরা দেখতে ছেলেকে যেতে দিলাম।"

বিজয় বলেন, "ধোবিঘাটে দশেরা দেখতে গেছিল ছেলে। এক বন্ধুর সঙ্গে। দুর্ঘটনার খবর শুনে আমি সেখানে যাই। ছেলেকে পাইনি। অনেক খুঁজেছি। পরে আমি হোয়াটসঅ্যাপে একটা ছবি পাই। দেখতে পাই, আমার ছেলের কাটা মুণ্ড পড়ে আছে। চমকে যাই। হাসপাতালে ছুটে আসি। এখনও ওর দেহ পাইনি।"

শুধু ট্রেনে কাটা নয়, অনেকের আবার মৃত্যু হয়েছে পদপিষ্ট হয়ে। চোখের সামনেই মেয়ে আর নাতনির মৃত্যু দেখেছেন কিমতি লাল। দশেরা পালন করবেন বলে মেয়ে অনুর কাছে এসেছিলেন লুধিয়ানায়। ধোবিঘাট গেছিলেন মেয়ে আর ১৮ মাসের নাতনিকে নিয়ে। গুরু নানক দেব হাসপাতালে শুয়ে কিমতি বললেন, "আমার মেয়ে, নাতনি ট্রেনে কাটা পড়েনি। আমরা দেখলাম ট্র্যাকে ট্রেন আসছে দ্রুতগতিতে। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। আমাদের উপর অনেকজন পড়ে যায়। তারপর আর কিছু মনে নেই।" 

এই সংক্রান্ত আরও খবর : অমৃতসর দুর্ঘটনা : "পালালেন" কংগ্রেস কাউন্সিলর
বাবা, বোনের মৃত্যু চোখের সামনে দেখেছেন গুরজিৎও। হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর দেহ নিতে এসেছিলেন। সেখানেই বলেন, "প্রত্যেকবার দশেরার অনুষ্ঠানে আসি। এরকম কোনওদিন হয়নি।" বোন, বাবাকে নিয়ে বলতে গিয়ে চোখে জল চলে এল গুরজিতের। বললেন, "বোনের বিয়ের বয়স হয়ে গেছিল। আর এখন সব শেষ হয়ে গেল। মা-ও অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না, আমার জীবনে আর কী পড়ে থাকবে।"

অমৃতসরের দুর্ঘটনায় ভাইকে হারিয়েছেন অজয় কুমার। তিনি দোষ দিচ্ছেন রেল কর্তৃপক্ষকেই। তাঁর কথায়, "ওদের জানা উচিত ছিল এখানে দশেরার অনুষ্ঠান চলছে। ট্রেন স্লো করার জন্য আগে থেকে নির্দেশ দেওয়া উচিত ছিল। কিছুই করেনি। ট্রেনটা তীব্রগতিতে ছুটে গেল। আমি দেখলাম, লোকজনের দেহ একপ্রকার উড়ে গিয়ে ছিটকে পড়ছে। পরে দেখি, আমার ভাই ট্র্যাকের এক পাশে পড়ে আছে।"