মাওবাদী বা জেএমবি জঙ্গি যোগের শঙ্কা গোয়েন্দাদের


নাগেরবাজারে বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ব্যবহার করা হয়েছে। আইইডি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়েছে একটি লোহার পাইপ। তার মধ্যেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরক ভরা হয়েছিল। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহের পর এব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত বম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজাল স্কোয়াডের সদস্যরা। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, এই জাতীয় বিস্ফোরক সাধারণ দুষ্কতীদের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই এর পিছনে অন্য রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে শহুরে মাওবাদী বা জেএমবি-র মতো কোনও সংগঠন জড়িত আছে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। কারণ এই জাতীয় বিস্ফোরক তারাই তৈরি ও ব্যবহার করে। কিন্তু কে বা কারা এমন বিস্ফোরক ওই জায়গায় রেখে গেল, সেটাই স্পষ্ট নয়। সেই কারণেই এলাকায় থাকা সিসি টিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ঘটনাস্থল থেকে স্পিল্‌ন্টার উদ্ধার হওয়ায় এবং কোনও গান পাউডার না মেলায় রহস্য অন্য দিকে মোড় নেয়। তাহলে কি আইইডি থেকেই বিস্ফোরণ, এই প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করে। কারণ অনুসন্ধানে আসেন বম্ব বিশেষজ্ঞরা। বারাকপুর পুলিস কমিশনারেটের সিপি রাজেশ সিং সহ শীর্ষ কর্তারাও বিস্ফোরণস্থল ভালো করে পরীক্ষা করেন। প্রাথমিকভাবে সিপি দাবি করেন, কম ক্ষমতাসম্পন্ন সকেট বোমা থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ষড়যন্ত্রের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার বিষয়টিও তদন্তে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে খবরাখবর নেওয়ার কাজ চলছে। সিআইডি সহ অন্যান্য এজেন্সি তাঁদের সাহায্য করছেন।

তবে বম্ব স্কোয়াডের বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থল থেকে যে সমস্ত নমুনা সংগ্রহ করেছেন, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটি সাধারণ কোনও বিস্ফোরণের ঘটনা নয়। জানা গিয়েছে, বিস্ফোরণ স্থল থেকে আট ইঞ্চির একটি লোহার পাইপ উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যেই রাখা ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিস্ফোরক। তার সঙ্গে গ্লিসারিন ও চিনি জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা জানিয়েছেন। যার মিশ্রণ ঘটে একটি রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ট্রিগার করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ইলেকট্রিক তার। এক্ষেত্রে 'বিলেটেড' প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে চটের থলিতে করে এনে রাখার বেশ কিছুক্ষণ পর বিস্ফোরণ ঘটে। তবে বিস্ফোরক অত্যন্ত কম পরিমাণে ছিল। 
কিন্তু এই আইইডি কীভাবে ওখানে এল, তা নিয়ে চিন্তা বেড়েছে পুলিস কর্তাদের। কারণ এই জাতীয় বিস্ফোরক তৈরি করা সাধারণ দুষ্কৃতীদের পক্ষে সম্ভব নয়। জেএমবি বা মাওবাদীরাই এই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করে। অনুমান করা হচ্ছে, যে বা যারা এই বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল, তারা বাইরে থেকে ওই সংগঠনের লোক ভাড়া করে নিয়ে এসে এই আইইডি তৈরি করিয়ে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে কেউ এখানে তা রেখেও যেতে পারে। পাশাপাশি তদন্তকারীদের এও ভাবাচ্ছে, আইইডি কিনে আনা হয়ে থাকতে পারে এই ধরনের সংগঠনের কোনও সদস্যের কাছ থেকে। তারপর কোনও ক্যারিয়ারকে ব্যবহার করা হয়েছে বিস্ফোরণের জন্য। তবে চক্রান্তকারীদের সঙ্গে এই সমস্ত সংগঠনের কারও যোগাযোগ না থাকলে আইইডি পাওয়া সম্ভব নয়। কে বা কারা যোগাযোগ রেখে চলেছে, বা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কেউ আছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা থেকে তা আনা হয়েছিল কি না, তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন অফিসাররা।