বিরাট নজিরের সামনে বিরাট কোহালি, ১৬ ইনিংসে চাই ৯০২ রান


দশ বছর হয়ে গেল অভিষেকের। এই এক দশকে বিরাট কোহালি জয় করেছেন একের পর এক শৃঙ্গ। বিশ্বজুড়ে শাসন করছেন বোলারদের। দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যাট রাজত্ব করছে বাইশ গজে। প্রায় প্রতিদিনই গড়ছেন নিত্য-নতুন রেকর্ড।

চলতি বছরে যেমন তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখনই ২০৯৮ রান করে ফেলেছেন কোহালি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, টানা তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০০ রান করলেন তিনি। এর আগে এই কৃতিত্ব রয়েছে সচিন তেন্ডুলকর, ম্যাথু হেডেন ও জো রুটের। তবে তিনিই প্রথম অধিনায়ক, যিনি টানা দু'বছর ২০০০ রান করলেন। ২০১৬ সালে তিনি অধিনায়ক ছিলেন না ওয়ানডে ফরম্যাটে।

কোহালি ২০১৭ সালে টেস্ট (১০৫৯ রান), ওয়ানডে (১৪৬০ রান) ও টি-টোয়েন্টি (২৯৯ রান) মিলিয়ে করেছিলেন মোট ২,৮১৮ রান।  ২০১৬ সালে টেস্ট (১২১৫ রান), ওয়ানডে (৭৩৯ রান) ও টি-টোয়েন্টি (৬৪১ রান) মিলিয়ে মোট রান হল ২,৫৯৫। যে দুরন্ত ধারাবাহিকতা দেখাচ্ছেন, তাতে ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম পুরুষ হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বছরে ৩০০০ রানও করে ফেলতে পারেন তিনি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কোহালি যেমন পাচ্ছেন আরও চার একদিনের ম্যাচ। তারপর ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধেই রয়েছে চার ম্যাচের তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। মানে মোট আরও সাত ম্যাচ। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছে ভারত। নভেম্বরেই তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ৬ ডিসেম্বর শুরু প্রথম টেস্ট। এই বছরে কোহালি পাচ্ছেন মোট তিন টেস্ট। মানে, সব মিলিয়ে তিন টেস্ট, চার ওয়ানডে ও ছয় টি-টোয়েন্টি পাচ্ছেন ভারত অধিনায়ক। অর্থ্যাত্, ১৩ ম্যাচে ১৬ ইনিংস পাচ্ছেন তিনি। যে দুরন্ত মেজাজে, তাতে ১৬ ইনিংসে আরও ৯০২ রান না-আসার কোনও কারণ নেই। তার উপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংয়ের কী দশা, সেটা দেখাই গিয়েছে রবিবার। অস্ট্রেলিয়াও মোটেই আগের মতো অপরাজেয় নেই। সদ্য পাকিস্তানের কাছে হেরেছে টেস্টে। মিচেল স্টার্করা কেউই বিধ্বংসী মূর্তিতে নেই। ক্রিকেট যদিও এক বলের খেলা, তবু কোহালিকে থামানোর কোনও মন্ত্র বিশ্বজুড়ে বোলারকুলের জানা রয়েছে বলেও মনে করছে না ক্রিকেটমহল।

পরিসংখ্যান অনুসারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সবচেয়ে বেশি রান রয়েছে শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কুমার সঙ্গাকারার (২৮৬৮)। তাঁকে টপকাতে কোহালির দরকার আরও ৭৭০ রান। সঙ্গাকারার পর তালিকায় রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক রিকি পন্টিং (২৮৩৩ রান), নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন (২৬৯২ রান), শ্রীলঙ্কার সদ্য প্রাক্তন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ (২৬৮৭ রান) ও বিরাট কোহালি (২৬৮১ রান)। কোহালি যদি ৩০০০ করতে পারেন তবে তো নজির সৃষ্টি করবেনই।যদি সঙ্গাকারাকেও টপকে যান তা হলে সেটাও রেকর্ড। 

এই বছরে টেস্টে এবং একদিনে মোট ৮ সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন তিনি। রবিবার গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে বর্ষার অবিরাম ধারার মতোই অনায়াসে পৌঁছে গিয়েছেন একের পর এক মাইলস্টোনে। রান তাড়ায় যেমন এটা তাঁর ২২তম সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে ১৪তম। সব মিলিয়ে একদিনে এটা কোহালির ৩৬তম সেঞ্চুরি। এখানে একটা তথ্য খুব আকর্ষণীয়। মাত্র ২০৪ ইনিংসে এতগুলো সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। তুলনায় সচিনের ৩৬ সেঞ্চুরি করতে লেগেছিল ৩১১ ইনিংস।
 
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোহালির মোট সেঞ্চুরির সংখ্যা দাঁড়াল ৬০। সচিনের ১০০ সেঞ্চুরির থেকে দূরত্ব আর ৪০ সেঞ্চুরির। দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জাক কালিসের  রয়েছে ৬২ সেঞ্চুরি। শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কুমার সঙ্গাকারার রয়েছে ৬৩ সেঞ্চুরি। চলতি বছরে এই দুই জনের মোট সেঞ্চুরির রেকর্ডও টপকে যেতে পারেন কোহালি। একমুখ দাড়ির যুবকের সামনে একের পর এক রেকর্ডের হাতছানি। আর কে না জানে, চ্যালেঞ্জ যত কঠিন হয়, তত সঙ্কল্পবদ্ধ দেখায় বিরাটকে!