স্বামীকে ঘরজামাই হতে বাধা দেওয়ায় সাঁইথিয়ায় শাশুড়িকে খুন, ধৃত পুত্রবধূ


রামপুরহাট: স্বামীকে ঘরজামাই থাকতে বাধা দিয়েছিলেন শাশুড়ি। সেই আক্রোশে শাশুড়ি কেরিমা বিবিকে (৭০) কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল বউমার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার রাতে সাঁইথিয়া থানার আদিরাপাড়া গ্রামে এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত বউমাকে ধরে মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে পুলিস এসে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের হাত থেকে ওই বধূকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মৃতার ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে বউমা নাসিরা বিবিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। শুক্রবার সিউড়ি আদালতে তাকে তোলা হলে ভারপ্রাপ্ত সিজেএম সোহন মুখোপাধ্যায় চারদিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিসের পক্ষ থেকে অবশ্য ধৃতকে ১০ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিরাপাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে ছেলে, বউমা ও নাতনিকে নিয়ে থাকতেন বৃদ্ধা কেরিমা বিবি। ছেলে শেখ হান্নান বাতাসপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শ্বশুরের করে দেওয়া একটি ফলের দোকান চালান। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ি থেকে ওই বৃদ্ধার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তাঁর গলায়, ঘাড়ে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার সময় তিনি নামাজ পড়ছিলেন। পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল সাড়ে চার বছরের নাতনি। সেই সময় পিছন থেকে তাঁকে শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপানো হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই ওই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। সেই সময় গ্রামের এক বাসিন্দা কেরিমা বিবির খোঁজে বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করেন। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর কোনও সাড়া না পাওয়ায় তাঁর সন্দেহ হয়। পরে তিনি গ্রামের বেশ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকে ওই বৃদ্ধার রক্তাক্ত মৃতদেহ দেখতে পান। এরপরই গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায় পাঁচ মাস ধরে বউমা নাসিরা বিবির সঙ্গে শাশুড়ি কেরিমা বিবির অশান্তি চলছিল। শাশুড়িকে প্রায়ই জুতো, লাঠি দিয়ে মারধর করত নাসিরা। স্বাভাবিকভাবেই ওইদিন কেরিমা বিবির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারের পর গ্রামবাসীদের অভিযোগের তির বউমার দিকেই যায়। উত্তেজিত গ্রামবাসীরা নাসিরা বিবিকে ধরে মারধর করতে থাকে। এনিয়ে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে গ্রামবাসীদের হাত থেকে বউমাকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় পুলিসকে। পরে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিস।

মৃতার ছেলে শেখ হান্নান বলেন, ঘটনার সময় আমি দোকানে ছিলাম। গ্রামের এক বন্ধুর কাছ থেকে খবর পেয়ে জানতে পারি মাকে খুন করা হয়েছে। তড়িঘড়ি বাড়িতে এসে দেখি, শোওয়ার ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। পাশেই পড়ে রয়েছে মায়ের নিথর দেহ। তিনি বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে শ্বশুরবাড়িতে আমাকে ঘরজামাই থাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল স্ত্রী। কিন্তু বৃদ্ধা মাকে ছেড়ে আমি শ্বশুরবাড়ি যেতে চাইনি। শ্বশুর ও শ্যালকও এনিয়ে আমাকে প্রতিনিয়ত চাপ দিত। তাছাড়া আমি বাপের ভিটে ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘরজামাই হয়ে থাকি মা সেটা চাননি। এনিয়ে প্রায়ই মায়ের সঙ্গে স্ত্রীর অশান্তি হতো। তাঁর অভিযোগ, শ্বশুর ও শ্যালকের পরামর্শেই নাসিরা আমার মাকে খুন করেছে। যদিও অভিযুক্ত নাসিরা বিবি প্রথমে খুনের ঘটনা অস্বীকার করে। পরে চেপে ধরতেই দোষ কবুল করে বলে গ্রামবাসীদের দাবি। রাতেই পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। বাড়ি থেকেই লুকিয়ে রাখা রক্ত মাখা শাড়ি ও খুনে ব্যবহৃত শাবল ও ধারালো অস্ত্রটি পুলিস উদ্ধার করে।