‘সাপ আপকা পয়সা খা গিয়া’… ছিনতাইয়ের নয়া কায়দা কলকাতায়

অরিত্র সেন। সাপুড়েরা অরিত্রর কাছ থেকেই টাকা ছিনিয়ে নেয়।

রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। হঠাৎই দেখলেন সামনে পথ আটকে এক জন। মাথায় কালো পাগড়ি। গায়ে নানা রঙের খোপ কাটা জোব্বা। কপালে লম্বা গেরুয়া তিলক। কিছু বোঝার আগেই লোকটির হাতে ধরা ঝুড়ির ঢাকাটা খুলে গেল আপনার মুখের সামনে। ভেতরে কুণ্ডলি পাকিয়ে একটা সাপ!

তিনি তখন আপনার কাছে মনসাপুজোর জন্য টাকা চাইবেন। কেউ হয়তো পাশ কাটিয়ে এগনোর চেষ্টা করলেন। যেমন করেছিলেন, ভবানীপুর এডুকেশন সোসাইটির ছাত্র অরিত্র সেন।

শনিবার সকাল দশটা নাগাদ অরিত্র কলেজে যাওয়ার জন্য ল্যান্সডাউন এবং এলগিন রোডের মুখে বাস থেকে নামেন। আর তার পরেই তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ান এ রকমই এক জন। পাশ কাটিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করলে একই চেহারার আরও দু'জন তাঁর রাস্তা আটকে দাঁড়ান।

অরিত্রের অভিযোগ, জোব্বা পরা লোকগুলো পুজোর জন্য টাকা চাইছিলেন। শেষ পর্যন্ত পাঁচ টাকা দিতে নিজের 'ওয়ালেট' খোলেন অরিত্র। আর তখনই সামনের সাপুড়েদের চোখে পড়ে ওয়ালেটে রাখা পাঁচশো টাকার নোটটি। অভিযোগ, তখনই প্রায় জোর করে সেই নোটটি ছিনিয়ে নেন ওই সাপুড়েরা। অরিত্র চিৎকার করে প্রতিবাদ করলে হঠাৎই তিন জনের মধ্যে এক জন তাঁর গলায় জড়ানো সাপটা অরিত্রের হাতে জড়িয়ে দেয়। ভয়ে হতচকিত হয়ে যান তিনি। আর সেই সুযোগে সাপ নিয়ে চম্পট দেয় সাপুড়েরা।

শুধু অরিত্র নন। কয়েক দিন আগেই ঠিক একই রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুমন সেন। অফিস যাওয়ার পথে তাঁকে ঠিক একই ভাবে পথ আটকান কয়েক জন 'সাপুড়ে'। রিজেন্ট পার্ক থানায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন সুমন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সকাল দশটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। সাপের পুজোর জন্য টাকা চাইছিল একদল সাপুড়ে। সুমন প্রথমে একটি দু'টাকার কয়েন দেন। অভিযোগ, সেই সাপুড়েরা প্রায় জোর করে তাঁর ব্যাগ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা ছিনিয়ে সাপের ঝাঁপিতে ঢুকিয়ে নেন। সুমন প্রতিবাদ করলে সাপ দিয়ে ভয় দেখানো হয় বলে অভিযোগ। সাপুড়েরা বলে— 'সাপ আপকা পয়সা খা গিয়া... যাও যাও ভাগো..'

এ রকম ভাবেই টাকা খুইয়েছেন আরও অনেকেই। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে গত কয়েক মাসে এই সাপুড়েরা গড়িয়া এবং গীতাঞ্জলি মেট্রো স্টেশনের সামনে একই ভাবে টাকা ছিনতাই করেছে। সুমন সেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান প্রবীন ত্রিপাঠিকে টুইট করে জানিয়েছিলেন। অরিত্রও কলকাতা পুলিশের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং পেজে জানিয়েছেন। অরিত্রের বাবা সাগর সেন বলেন, "লালবাজার থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখার ব্যাপারে তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন।"

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ওয়াচ সেকশনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে কলকাতায় এ রকম বেশ কয়েকটি দল সক্রিয়। মূলত দলগুলি ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের। দলগুলিকে পাকড়াও করার চেষ্টা করছে পুলিশ।