বিদেশি লগ্নির টোপ, কলকাতায় সক্রিয় ‘কর্পোরেট প্রতারণা চক্র’


অভিযুক্ত শুভ্রপ্রতাপ দাশগুপ্ত। এই শুভ্রপ্রতাপকে বিশ্বাস করেই পথে বসেছেন শেখ জিন্নার আলি।

শেখ জিন্নার আলি দক্ষিণ কলকাতায় একটি মাঝারি মাপের জনসংযোগ এবং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কোম্পানি চালান। সম্প্রতি আরও বড় কিছু কাজের বরাত পেয়েছিলেন, কিন্তু পুঁজির অভাবে সেই বরাত নিতে পারছিলেন না।

আর তখনই তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে তাঁর আলাপ হয় শুভ্রপ্রতাপ দাশগুপ্ত নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। প্রথম আলাপেই শুভ্রপ্রতাপের কথাবার্তায় কার্যত মুগ্ধ হয়ে যান জিন্নার। যে ব্যক্তির মাধ্যমে জিন্নারের শুভ্রপ্রকাশের সঙ্গে আলাপ, সেই দীপঙ্কর মালো শুভ্রপ্রতাপের পরিচয় দিয়েছিলেন মধ্য প্রাচ্যের একটি প্রথম সারির অর্থনৈতিক সংস্থার প্রথম সারির কর্তা হিসাবে। কিন্তু সেই কর্তাকেই বিশ্বাস করে রীতিমত পথে বসেছেন জিন্নার। প্রতারণার নয়া ছক দেখে তাজ্জব পুলিশও।

জিন্নার বলেন, "শুভ্রপ্রতাপের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর তিনি বলেন, তাঁর কোম্পানি আবু ধাবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ ভারতের বিভিন্ন কোম্পানিতে টাকা ঢালতে আগ্রহী।" শুভ্রপ্রতাপ নজির হিসাবে দেখান, রাজস্থান পিডব্লিউডি-র একটি ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পে তাঁদের কোম্পানি লগ্নি করেছে। জিন্নার বলেন, "আবু ধাবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ এবং রাজস্থান পিডব্লিউডি-র কিছু নথিও দেখান শুভ্রপ্রতাপ। আর তা দেখে তাঁর কথা অবিশ্বাস করার কিছু খুঁজে পাইনি।"

শুভ্রপ্রতাপ জিন্নারকে ৫ কোটি টাকা ঋণ পাইয়ে দেওয়ার প্রতশ্রুতি দেন। কিন্তু বলেন, গোটা ডিল-এর জন্য তাঁকে ২ লাখ টাকা কমিশন দিতে হবে। জিন্নারের অভিযোগ, নগদে ৪০ হাজার এবং বাকি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা তিনি তাঁর কোম্পানির অ্যাকাউন্ট থেকে শুভ্রপ্রতাপের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেন। আর তার পর থেকেই বেপাত্তা সেই 'কর্পোরেট কর্তা'।
জিন্নারের অভিযোগ, একই সময় থেকে গায়েব সেই দীপঙ্কর মালো, যার মাধ্যমে শুভ্রপ্রতাপের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। দু'জনেরই ঠিকানাতে গিয়ে দেখা যায়, সেটাও ভুয়ো।

শেষ পর্যন্ত কসবা থানাতে অভিযোগ দায়ের করেছেন জিন্নার। তবে এখনও পুলিশও কোনও হদিশ করতে পারেনি ওই 'কর্পোরেট প্রতারকের'। এক তদন্তকারী আধিকারিকের দাবি, খোঁজ খবর নিতে গিয়ে আমরা জানতে পেরেছি, খালি জিন্নার নয়, এরকম আরও কিছু মাঝারি মাপের কোম্পানিকে বিদেশ থেকে লগ্নি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণা করছে একটি চক্র। পুলিশের সন্দেহ, শুভ্রপ্রতাপও ওই চক্রেরই অংশ।