পুরাতন মালদহের কোলপাড়ায় ৫ ভাইবোনের অভিভাবক ৯ বছরের কাজলি

কাজের সন্ধানে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিয়েছে বাবা-মা


মালদহ : দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করতে নেমে মাত্র ন'বছর বয়সেই বাড়ির অভিভাবক হয়ে উঠেছে কাজলি। অর্ধাহারের মধ্যে ঘর সামলানো থেকে শুরু করে ভাইবোনদের খাওয়ানো, দেখভাল— সবাই করে কাজলি। এই অসম লড়াইয়ের মধ্যেই ভাইবোনদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে সে। পুরাতন মালদহের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের কমলদিঘি কোলপাড়ায় ওই শিশু পরিবারটি থাকে। সংসারে আর্থিক সংকটের কারণে অনাহারে বাবা-মা দু'জনেই ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। বাবা-মায়ের জায়গায় সংসারের হাল ধরেছে কাজলি কোল(৯)। তারা পাঁচ ভাইবোন এক সঙ্গেই থাকে। তাদের নাম সমিতা (৮), জয়দেব (৭), দেবা(৫)এবং উর্মিতা (১০)। উর্মিতা কানে শোনে না। চোখেও দেখে না। বৃহস্পতিবার রাতেই সে দিকভ্রষ্ট হয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। পুলিস তাকে উদ্ধার করেছে। বর্তমানে মালদহ থানার হেফাজতে রয়েছে সে।
শিশুদের এই জীবন সংগ্রাম নিয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বিজেপির সতেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা যে আমাদের সংসদে এরকম একটা পরিবার রয়েছে। কখনও আধপেটা খেয়ে আবার কখনও না খেয়ে দিন চলে ওই শিশুদের। সংসারের অভাব দেখে বাব-মা তাদের ছেড়ে বাইরে কাজ করতে চলে গিয়েছে। পরিবারটির বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা যতটা পারি সাহায্য করে থাকি। পঞ্চায়েত থেকে চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে ওই শিশুরা খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে পরে।
ওই শিশু পরিবারের প্রতিবেশী শুকুর মণি কোল বলেন, ফাঁকা বাড়িতে ওই শিশুরা থাকে। বাড়িতে পরিবারের বড় বলতে কেউ নেই। একটু চালাক চতুর কাজলি বাকিদের দেখভাল করছে। সমস্যা হলে আমরা তাদের পাশে থাকি। পুরাতন মালদাহ ব্লকের বিডিও নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, পরিবারটির কথা শুনেছি । আমি ব্লক থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। ব্লক প্রশাসন থেকে যতটুকু সাহায্য করার তা পরিবারটিকে করা হবে। মালদহ থানার আইসি মানবেন্দ্র সাহা বলেন, এক মূক ও বধির শিশু উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করছিল। আমরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করেছি। শিশুটিকে হোমে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাছাড়া বাকিদেরও ভালোভাবে রাখার জন্য চিন্তাভাবনা করছি। কাজলি কোল বলে, হোমে যেতে চাই না। বাড়িতেই ভালো ভাবে থাকতে চাই। কেউ সাহায্য করলে ভালো।

পুরাতন মালদহের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর চেঁচু মোড় থেকে ডান দিকের কাঁচা রাস্তায় ঢুকে গেলে কমলদিঘিতে কোল পাড়া রয়েছে। সেখানে পাঁচ ভাইবোনকে নিয়ে বসবাস করছে কাজলি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ঘুমাবার জায়গাটাও ঠিক নেই। ন'বছর বয়সেই রান্নাবান্না করে সকলকে খাওয়ায় ছোট্ট কাজলি। অনেক দিন অনাহারে বা আধপেটা খেয়ে তাদের দিন কাটে।