চুরিতে বাধা, গলা টিপে খুন প্রৌঢ়াকে

আভা সাহা, ধৃত বাপি মণ্ডল।

মুখের উপরে বালিশ চেপে সাঁড়াশির মতো দু'হাত দিয়ে গলাটা টিপে ধরেছিল বছর বাইশের যুবক। তার মধ্যেই কোনও রকমে গোঙাচ্ছিলেন প্রৌঢ়া। প্রতিবেশীরা ঘরে ঢুকে যুবককে ধরে ফেললেও বাঁচানো গেল না তাঁকে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতে, বেলেঘাটার গগন সেন রোডের একটি বাড়িতে। নিহত প্রৌঢ়ার নাম আভা সাহা (৫৩)। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, আভাদেবীর বাড়িতে চুরি করতেই ঢুকেছিল বাপি মণ্ডল নামে ওই যুবক। আভাদেবী বাধা দিতে গেলে তাঁকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। বাপিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অবিবাহিত আভাদেবী গগন সেন রোডে একটি এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয় একটি ল্যাম্প তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। বাড়ির কাছেই থাকেন তাঁর দাদা গোপাল সাহা ও দিদি শোভা রায়। প্রৌঢ়া সারা দিন থাকতেন দিদির সঙ্গে। রাতে নিজের ঘরে শুতে আসতেন। রবিবার রাতেও সে রকমই এসেছিলেন। প্রতিবেশী সবিতা বসু বলেন, ''রবিবার রাত তিনটে নাগাদ শৌচাগারে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম। তখনই গোঙানির আওয়াজ পাই। সঙ্গে ঘরের ভিতরে ধস্তাধস্তির শব্দ। বুঝতে পারি, বাইরের কেউ ওঁর ঘরে ঢুকেছে। তখন চিৎকার করে আশপাশের বাড়ির লোকদের ডাকি।''

আভাদেবীর বাড়ির গ্রিলের দরজা ভিতর থেকে তালা দেওয়া ছিল। তালার একটি চাবি থাকত আভাদেবীর ভাই গোপালবাবুর কাছে। স্থানীয়রা সকলে জড়ো হলে গোপালবাবুই দরজা খুলে ঘরে ঢুকে দেখেন, এক যুবক আভাদেবীর গলা চেপে ধরে রয়েছে। ছটফট করছেন তিনি। ওই যুবককে ধরে ফেলেন সবাই। আভাকে পাঠানো হয় এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মৃত। গোপালবাবু বলেন, ''গলায় গভীর ক্ষত হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শ্বাসরোধ হয়েই দিদির মৃত্যু হয়েছে।''

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত বাপি এলাকায় কল সারাইয়ের কাজ করত। ফলে ওই পাড়ায় তার যাতায়াত ছিল। দিন কয়েক আগে আভাদেবীর বাড়িতেও সে জলের পাইপ সারানোর কাজ করেছিল। রবিবার মাঝরাতে আভাদেবীর ঘরের দরমা কেটে ঢোকে বাপি। প্রৌঢ়া সব সময়েই সোনার গয়না পরে থাকতেন। সেগুলি চুরি করতেই বাপি তাঁর ঘরে ঢুকেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ। ধস্তাধস্তিতে আভাদেবীর কানের দুল ছিঁড়ে নেয় অভিযুক্ত। গোপালবাবু বলেন, ''দিদির একমাত্র শখ ছিল সোনার গয়না পরা। বহু বার বলেছিলাম, এ ভাবে সোনার গয়না পরে না ঘুরতে। কিন্তু এমন যে ঘটে যাবে, ভাবিনি।''

সোমবার বেলেঘাটায় গিয়ে দেখা গেল, ঘরটি সিল করে দিয়েছে পুলিশ। দরমার দেওয়ালের কিছু জায়গায় ফুটো হয়ে গিয়েছে। গোপালবাবুর কথায়, ''চতুর্থীর দিন পাড়ায় পুজো উদ্বোধন হল। তখনও দিদির সঙ্গে কত কথা হল। পুজো কী ভাবে কাটাবে, তা নিয়ে দিদি কত রকম পরিকল্পনার কথা বলেছিল! কী যে হয়ে গেল!''