সম্বল মেধা, স্যাটে সফল খেতমজুরের ছেলে


লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কোচিংয়ের পড়াশোনা শেষেও বহু সচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়ে যে সাফল্য পান না, কেবল মেধার জোরে সেই কাজটা করে দেখিয়েছেন খেত মজুরের সন্তান সৌমেন গোলদার। স্যাট (স্কলাস্টিক অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট)-এ কৃতকার্য হয়েছেন তিনি। বাবা কৃষ্ণপদ খেত মজুর। সংসার চালাতে সুই-ধাগায় ফোঁড় তোলেন মা বাসন্তী। সামান্য রোজগারে কোনওক্রমে সংসার চলে। কিন্তু সেই অনটনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেধাবী সৌমেন স্যাট-এ সফল। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চান তিনি।

কিন্তু স্যাটে সাফল্য তাঁকে আমেরিকা-সহ কয়েকটি ভিন্‌ দেশে পড়াশোনার ছাড়পত্র দিলেও অভাবের সংসারে সেটা কতদূর সম্ভব হবে, সেটাই সৌমেনের চিন্তা। চিকিৎসক হয়ে আগামী দিনে মানুষের সেবা করতে চান তিনি। যতদূর সম্ভব ছেলেকে সাহায্য করছেন তাঁর বাবা-মামা। এখন যাদবপুরের সন্তোষপুরে থাকলেও সৌমেনের ছোটবেলা কেটেছে বেলঘরিয়ায়। দিদি, মা-বাবাকে নিয়ে এক কামরার ছোট্ট বাড়িতে ছিল বসবাস। বাবা অন্যের খেতে চাষের কাজ করেন। কিন্তু তাতে সংসার চালিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ জোগানো প্রায় অসম্ভব। স্বামীকে সাহায্যের জন্য ঘরে বসে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন বাসন্তী। এ ভাবেই কোনও রকমে টেনেটুনে চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু নিত্য টানাটানির ঘরে যেখানে ছেলেকে বড়জোর স্নাতকটুকু করতে পারবেন বলে স্বপ্ন দেখতেন গোলদার দম্পতি, সেখানে স্যাট, আমেরিকা, ডাক্তারি, এ সব তাঁদের কাছে অনেক দূরের ভাবনা। 

সৌমেন কিন্তু স্বপ্নের ঘুড়িটা উড়িয়েছিলেন অনেক উঁচুতে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফল। আইআইটি ইন্দোরে সুযোগ পেয়ে পড়তে গিয়েও চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন সফল করতে ফিরে আসে। শুরু করেন স্যাটের প্রস্তুতি। তাঁর কথায়, 'দশম শ্রেণি থেকে টিউশন পড়াতাম। কিন্তু তাতে হয়নি। দুই বন্ধুর থেকে টাকা ধার করে স্যাটের বইপত্র কিনি, এক আত্মীয় স্মার্টফোন দেন। সেখানে ইন্টারনেট ঘেঁটে ইংরেজি পড়তে থাকি। এখন বিদেশে গিয়ে ডাক্তারি পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।'বাসন্তী জানান, ছেলে বরাবরই পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু মেধাবী ছেলেকে কোনওক্রমে স্নাতক করতে পারবেন বলে ভেবেছিলেন দরিদ্র বাবা-মা। বাসন্তীর কথায়, 'স্যাট কী, সেটাই আমরা জানতাম না।' সৌমেন জানান, উদ্দীপন এডুকেশন ট্রাস্ট নামে একটি সংস্থা নবম শ্রেণি থেকে তাঁকে সাহায্য করেছে। তবে এখন পড়াশোনা চালানোর জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ পাওয়া নিয়ে চিন্তা ওই ছাত্রের। তিনি বলেন, 'বিদেশে গিয়ে ডাক্তারি পড়া বোধহয় সম্ভব হবে না। ৩০ লক্ষ টাকা দরকার। সে জন্য ঋণ পেতে হলে বন্ধক রাখার মতো কিছু আমাদের নেই। তাই দেশেই ভালো কোনও মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করব বলে ঠিক করেছি।' ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে বাড়ি ছেড়েছেন কৃষ্ণপদ। বাড়তি টাকা রোজগারের জন্য সম্প্রতি রাজস্থানে পাথরের কাজ করতে গিয়েছেন তিনি। সৌমেনও অবশ্য হাল ছাড়েননি। মেধার জোরে লড়াই চালাচ্ছেন।