এক বোতল ঠান্ডা পানীয়ের থেকেও ভারতে সস্তা এক জিবি ডেটা: মোদি


টোকিও : ঠান্ডা পানীয়ের ছোট্ট বোতলের থেকেও ভারতে সস্তা এক জিবি ইন্টারনেট ডেটা। জাপানে বংশোদ্ভূত ভারতীয় সম্প্রদায়ের সামনে সোমবার এভাবেই দেশের ডিজিটাল পরিকাঠামোর কথা তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় দেশের ব্যাপক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে 'নয়া ভারত' গড়তে তাঁদের অবদান রাখার আর্জি জানান তিনি। একইসঙ্গে, দেশের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে জাপানি শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের আরও বেশি করে ভারতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সুরক্ষা নিয়ে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সহ অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি।

১৩তম বার্ষিক ভারত-জাপান সম্মেলনে যোগ দিতে গত শনিবারই টোকিওতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেই লক্ষে এদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে সহ একাধিক শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেন তিনি। রবিবার মাউন্ট ফুজি সংলগ্ন ছবির মতো সুন্দর একটি রিসর্টে আট ঘণ্টা একসঙ্গে সময় কাটান মোদি-আবে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কীভাবে নয়া উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। তারপর এদিন সম্মেলনে যোগ দিতে আবের বাসভবন কান্তেইয়ে আসেন মোদি। সেখানে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ছাড়াও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল সহ বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন আবে-মোদি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্ষমতা প্রদর্শন নিয়ে অচলাবস্থা অব্যাহত। যার জেরে চীনের সঙ্গে ভারত ও আমেরিকার সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে। এদিন দুই রাষ্ট্রপ্রধান দু'দেশের মধ্যে 'টু-প্লাস-টু' বৈঠকে রাজি হয়েছেন। পাশাপাশি, জাপান-ভারত যৌথ সহযোগিতায় তৈরি মুম্বই-আমেদাবাদ হাই-স্পিড রেল প্রকল্পেরও অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন আবে-মোদি। উক্ত প্রকল্পের জন্য ঋণ দিতেও রাজি হয়েছে আবের দেশ। এছাড়াও নৌবাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে ১২ বার আাবের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।

এর আগে জাপানের বিদেশমন্ত্রী তারো কোনো, বাণিজ্যমন্ত্রী হিরোশিগে সেকো, কানাগাওয়া প্রদেশের গভর্নর ইউজি কুরোইয়া, শাসক দল এলডিপির সেক্রেটারি জেনারেল থোসিহিরো নিকাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বাণিজ্য সহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে তাঁদের মধ্যে বলে জানিয়েছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার। এছাড়া আয়ুর্বেদিক ঔষধ তৈরিতে জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দু'দেশের মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ বিষয়ে ট্যুইটবার্তায় রবীশ কুমার জানিয়েছেন, 'স্বাস্থ্য ও কল্যাণ খাতে কানাগাওয়া প্রদেশ এবং আয়ুষ মন্ত্রকের মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।'

দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পর ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সভায় ভাষণ দেন মোদি। সেখানে তিনি ডিজিটাল পরিকাঠামোয় ভারতের অতুলনীয় অগ্রগতির পক্ষে সওয়াল করেন। টেলি যোগাযোগ ও ইন্টারনেটের বিস্তারের কথা উল্লেখ করে ভারত এক বিরাট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ডিজিটাল লেনদেনে 'জ্যাম' (জনধন যোজনা, আধার ও মোবাইল)-কে দেশের রোল মডেল আখ্যা দেন তিনি। মোদির কথায়, 'ডিজিটাল পরিকাঠামোয় ভারত ব্যাপক অগ্রগতি করছে। গ্রামে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, সারা দেশে সক্রিয় ১০০ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোন। ঠান্ডা পানীয়ের ছোটো বোতলের থেকেও ভারতে সস্তা এক জিবি ইন্টারনেট ডেটা। আর এই ডেটাই পরিষেবা প্রদানের প্রধান অস্ত্রে পরিণত হয়েছে।'

অনাবাসীদের মঞ্চে তাঁর স্বপ্নের 'মেক ইন ইন্ডিয়া'র সাফল্যের কথাও ব্যাপকভাবে তুলে ধরেন মোদি। বলেন, 'আমরা শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের জন্য উন্নতমানের পণ্য উৎপাদন করি। বৈদ্যুতিন ও অটোমোবাইল পণ্য উৎপাদনে গ্লোবাল হাব-এ পরিণত হচ্ছে ভারত। খুব দ্রুত আমরা বিশ্বের পয়লা নম্বর মোবাইল প্রস্তুতকারক দেশের দিকে এগোচ্ছি আমরা।' দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে কনসাল্টিং সংস্থা ইওয়াই-এর রিপোর্টের কথা অনাবাসীদের কাছে তুলে ধরেন মোদি।

২০২২ সালে যে নয়া ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন সেখানে তাঁদের শামিল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সেইসঙ্গে মহাকাশ গবেষণায় দেশের সাফল্যের খতিয়ানও উল্লেখ করেন মোদি। তাঁর কথায়, 'গত বছর ১০০-এরও বেশি উপগ্রহ পাঠিয়ে রেকর্ড গড়েছে ভারত। আমরা ন্যূনতম ব্যয় চন্দ্রযান ও মঙ্গলযান পাঠিয়েছি। এখন ২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে গগনায়ণ পাঠাবে ভারত। সেটি হবে আপাদমস্তক ভারতীয় এবং সেখানে একজন ভারতীয়ই মহাকাশে যাবেন।'