আজ মহালয়া, দেবীপক্ষের সূচনায় দূর্গা-আরাধনার আগমনী


আশ্বিনে মাখা রোদে কাসফুলের দলুনি। বর্ষা বিদায়ের মাটির সোদাঁ গন্ধে পুজো-পুজো আমেজ। নিয়ম করে গত কয়েক মাস ধরে মেতে থাকা কেনাকাটায়। এখন যার চূড়ান্ত ফাইনাল টাচ। পুজো মণ্ডপগুলো-তে জোরদার তোড়জোড়। আসলে সকলেই এখন চূড়ান্তভাবে উমা বরণের প্রস্তুতি ব্যস্ত। 

ক্যালেন্ডারের পাতা আর পাঁজির হিসাব বলছে দুর্গাপুজোর পুজোর বোধনে আর ৬দিন বাকি। আর সেই দিন থেকে অপার বাংলা মেতে উঠবে উমা-আরাধনায়। কিন্তু, সেই চূড়ান্ত উৎসবের শুরু আগেই আনন্দ-উৎসবের ঢাকে আজ থেকেই কাঠি পড়ে গেল। কারণ আজ মহালয়া। এদিন থেকে পিতৃপক্ষের শেষ হয়ে দেবীপক্ষের শুরু। এই সময়ে মা দূর্গা-র মহিষাসুরমর্দিনী রূপ প্রকট হয়েছিল।

সেই কারণে মহালয়া মানেই বাঙালিদের কাছে দুর্গোৎসবের সূচনার প্রিল্যুড বললে অত্যুক্তি হয় না। সারা বছর বাঙালির ভোরে ঘুম থেকে ওঠার শপথ নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু, মহালয়ার ভোরে তিনটে সাড়ে তিনটায় ঘুম থেকে উঠে রেডিও-তে হয়ে চলা স্তোত্র পাঠে কান পাতাটা বাঙালির অন্যতম অভ্যাস। টেলিভিশনে মহিষাসুর মর্দিনীরি চিত্রনাট্যরূপ-এর দাপাদাপিও যাতে থাবা বসাতে পারেনি।

মহালয়ার এই দিনেই জেগে উঠে বাড়ির এককোণে বছরভর অবহেলায় পড়ে থাকা রেডিওসেটটি। যদি তাতে কিছু গোলমাল নজরে আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা সারিয়ে নিতে বাঙালির কঠিন ব্যস্ততাও চোখে পড়ার মতো। আসলে, মহালয়া মানেই যে পুজোর শুভারম্ভের লগ্নে শরিক হওয়া। পুরুষানুক্রমে বাঙালির ঘরে ঘরে সকলেই তো এই শুভারম্ভেরর সঙ্গে মন-প্রাণে সেই ছোট্টবেলা থেকে জড়িত।

পুরাণ কাহিনি-তে আছে, মহালয়াতেই দুর্গা-প্রতিমার চক্ষুদান হয়। মানে মা-এর মৃণ্ময়ী ও চিন্ময়ী রূপের সৃষ্টির কাল এটি। কথ-কথায় প্রচলিত অসুরদের বধর করতে মা দুর্গার সৃষ্টি-তেই এভাবেই তো মেতেছিলেন শিব থেকে শুরু করে বিষ্ণু, দেবরাজ ইন্দ্র, ব্রহ্মা-সহ বিভিন্ন দেব-দেবতা। আসলে মা উমার পতিগৃহ ছেড়ে পিতৃগৃহ-এ আগমনটা তো বিজয়ের আনন্দে। কারণ মা উমার-ই তো আরএক রূপ মা-দূর্গা। মহিষাসুর বধের পর সপরিবারে সেই বিজয়-উৎসব পালনেই তাঁর পিতৃগৃহে আগমন। যার সূচনা হয় মহাষষ্ঠীতে। দীর্ঘদিন পর মেয়ে-কে কাছে পেয়ে বাঁধন-হারা আবেগে ভেসে যান হিমালয়রাজ ও মেনকা। উমার-এই পিতৃগৃহে আগমনের কাহিনির সঙ্গে তো বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটির বাপের বাড়ি-তে ফেরার ঘটনার মিল। মেনকা যেমন মেয়ে উমা এবং নাতি-নাতনি গণেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী-দের আগমনের পথ চেয়ে থাকেন, তেমনি বাংলার ঘরে ঘরে এমনভাবেই তো বিয়ে হয়ে যাওয়াটা মেয়েটার পথ চেয়ে থাকেন মা। উমার আগমনে তাই বেজে ওঠে আনন্দের বার্তা। কটা দিনের জন্য উমা ও মেনকার মিলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায় ঘরে ঘরে থাকা মা-মেয়েরা। আর সেই মিলনকে ঘিরেই বেজে ওঠে উৎসবের ঘণ্টা। যার আগমনীর সূচনা করে দিল মহালয়া। সেই কারণে চূড়ান্ত সেই আনন্দক্ষণে প্রবেশের জন্য এখন শুধুই প্রস্তুতি।