গণধর্ষণের পর শরীরে লোহার রড! নির্ভয়ার ছায়া ধূপগুড়িতে


একাদশীর সন্ধেয় অন্ধকার নেমে এসেছে। দেওরের ছেলের ডাকে বাড়ির বাইরে পা দিতেই মধ্য তিরিশের আদিবাসী বধূটির মুখ চেপে ধরল কয়েক জন। তাঁকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল গ্রাম থেকে কিছু দূরে গিরান্ডি নদীর ধারের একটি ঝোপে।

ধূপগুড়ির নিরঞ্জনপাটের বাসিন্দা ওই মহিলার অভিযোগ, তাঁকে গণধর্ষণ করে শরীরে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়েছে তাঁরই শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ওই অবস্থাতেই তাঁকে রাস্তায় ফেলে চলে যায় তারা। ব্যথায়, রক্তপাতে অচেতন হয়ে সারা রাত পড়েছিলেন মহিলা। রবিবার বেলার দিকে এক ভ্যানচালক তাঁকে দেখতে পেয়ে গ্রামে খবর দেন। ঘটনার প্রায় আঠারো ঘণ্টা পরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।

গিরান্ডি নদীতে দুর্গাপুজোর ভাসান হয়। তিন সন্তানের জননী এই মহিলাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ভাসানের ঘাট থেকে দূরে নির্জন একটি এলাকায়। সেই রাতে গ্রামের আর কেউই বুঝতে পারেননি কী হয়েছে। এ দিন সকালে দিনমজুর পরিবারের এই বধূকে প্রথমে ধূপগুড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিকেলে চিকিৎসক মৌমিতা শর্মা বলেন, ''প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ওঁর। একটু সুস্থ হলে অস্ত্রোপচার করা হবে। রক্ত দেওয়া হচ্ছে।'' অভিযুক্তদের মধ্যে দেওরের ছেলের সঙ্গে তারই দু'জন বন্ধু ছিল বলে খবর। পুলিশের কাছে তিন জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন মহিলা। তাদের মধ্যে দেওরের ছেলে-সহ দু'জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের বয়স কুড়ির ঘরে। সকলেরই বাড়ি মহিলার গ্রামেই।

ধর্ষণের পরে রড ঢুকিয়ে অত্যাচারের ঘটনায় দিল্লির জ্যোতি সিংহ (নির্ভয়া), এ রাজ্যে বরাহনগর এবং কুশমন্ডির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে গ্রামবাসীদের। দক্ষিণ দিনাজপুরে কুশমন্ডিতে এ বছর জুলাইয়েই এক আদিবাসী মহিলাকে একই ভাবে অত্যাচার করে ফেলে রাখা হয় সেতুর নীচে। কিন্তু এখানে আত্মীয়দের মধ্যে থেকেই অত্যাচার চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে আরও বেশি শিহরিত ধূপগুড়ি। এর আগে ২০১৪ সালে পুজোর মুখে ধূপগুড়িতে দশম শ্রেণির এক ছাত্রী নির্যাতনের শিকার হয়। পরের দিন রেললাইনের ধার থেকে তার বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়েছিল। 

এ দিন পুলিশের এডিজি অনুজ শর্মা জানিয়েছেন, নিরঞ্জনপাটের ঘটনায় জেলা পুলিশকে তিন দিনের মধ্যে চার্জশিট দিতে বলা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, জমির ভাগাভাগি নিয়ে অনেক দিন ধরেই বিবাদ চলছিল। সেই রাগেই অত্যাচার করা হয় বলে ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী ধূপগুড়ি থানায় দাবি করেছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এলাকায় অভিযুক্তদের যথেষ্ট দুর্নাম আছে। মহিলার স্বামীর হাহাকার, ''ওরা আমাকে অনেক দিন ধরে শাসাচ্ছিল। কিন্তু আমার স্ত্রীকে এ ভাবে নির্যাতন করবে ভাবিনি!''