মদ আর মাদক নিয়ে ফের ছাত্র সংঘর্ষ যাদবপুরে


যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা এবং মাদকের রমরমা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বার শুধু অভিযোগ ওঠাই নয়। বেধে গেল ছাত্র-সংঘর্ষ। চলল পড়ুয়াদের অবস্থান-বিক্ষোভ।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, কয়েক জন বহিরাগত মত্ত অবস্থায় রবিবার রাতে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। তাঁদের এক জন ক্যান্টিনের কর্মীর কাছে জল খেতে চান। অভিযোগ, জলের বদলে তাঁকে অন্য কোনও তরল দেওয়া হয়। শোভন বিশ্বাস নামে এক যুবক সেই জন্য ওই কর্মীকে মারধর করেন। কলা বিভাগ থেকে এসএফআই-সমর্থক পড়ুয়ারা চলে আসেন। শোভনের সঙ্গে বচসা শুরু হয় তাঁদের। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদ ফেটসু-র সহ-সাধারণ সম্পাদক অরুণাশিস মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষক শোভনকে সেই সময় মারধর করা হয়। বিষয়টি জেনে ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে আসেন রেজিস্ট্রার চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। তাঁর  হস্তক্ষেপে গন্ডগোল থামে। 

কিন্তু সোমবার আবার গোলমাল শুরু হয়। কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথের অভিযোগ, দর্শনের ছাত্র সোহম চট্টোপাধ্যায় যাদবপুর থানার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে মারতে মারতে থানার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-টু ব্লকে নিয়ে যান শোভন। সোহমকে বাঁচাতে দেবরাজ এবং অন্য দু'জন হস্টেলে গেলে তাঁদেরও বেধড়ক মারধর করা হয়। দেবরাজ জানান, এ দিন হস্টেলে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের বেশির ভাগই হস্টেলের আবাসিক নন। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া না-হয়েও দিনের পর দিন হস্টেলে রয়েছেন। এসএফআইয়ের অভিযোগ, ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংগঠন ডিএসএফের সদস্যেরা এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। রেজিস্ট্রার হস্টেলে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুল্যান্সে আহত পড়ুয়াদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠান।

গোলমালের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে এসএফআই। দেবরাজ জানান, তাঁদের দাবি, গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। পদত্যাগ করতে হবে হস্টেলের সুপারকে। যাঁরা আবাসিক নন, তাঁদের হস্টেল থেকে বার করে দিতে হবে। অরুণাশিস জানান, তাঁরা দু'দিনের ঘটনারই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চান। শোভনের বক্তব্য, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেই আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে। ক্যান্টিন কর্মীকে তিনি যে মারধর করেছেন, শোভন তা স্বীকার করে নিয়েছেন।

রেজিস্ট্রার জানান, যাদবপুর থানায় বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁরা নিজেরাও তদন্ত করবেন। এ দিন বিষয়টি নিয়ে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি জুটা। সংগঠনের সহ-সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ''কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি, যারা হস্টেলে রয়েছে অথচ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, অবিলম্বে তাদের হস্টেল থেকে বার করে দিতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনায় যারা দায়ী, ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধে।''

গত শনিবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠকে বহিরাগতদের আনাগোনার বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন কলা বিভাগের ছাত্র সংসদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যেরা। তবে সে-দিন কর্মসমিতি এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তার পরে ফের এই গোলমালে নানা প্রশ্ন উঠছে শিক্ষা শিবিরে। কেন প্রেসিডেন্সি আর যাদবপুরেই যত গন্ডগোল, বারবার সেই প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। চলতি মরসুমে প্রবেশিকা পরীক্ষাকে ঘিরে ব্যাপক গোলমালের পরেও জোরদার হয় সেই প্রশ্ন। শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, যাদবপুরের মতো প্রতিষ্ঠান আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে সমালোচনার জবাব দিতে পারবে না কেন?