চাঁদের মাটিতে নামতে তৈরি ল্যান্ডার বিক্রম, তামিলনাড়ুতে পরীক্ষা শেষে জানাল ইসরো


কলকাতা: চন্দ্রায়ন-২ যাতে সফল হয় তার জন্য এখন চলছে নানাবিধ পরীক্ষা। শুক্রবার 'চাঁদের পৃষ্ঠে যান নামানো'র পরীক্ষা সফলভাবে করল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো। তামিলনাড়ুর মহেন্দ্রগিরিতে সফলভাবে এই পরীক্ষা করলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রায়ন-১ সফলভাবে পাঠিয়েছিল ইসরো। ভারতীয় সেই মহাকাশযানই প্রথম চন্দ্রপৃষ্ঠের একাংশে বরফাকৃতিতে জলের অস্তিত্ব রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে নাসাও সেই তথ্যে সীলমোহর দেয়। চন্দ্রায়ন-১'র সফল অভিযানের পরই ফের চাঁদে মহাকাশযান পাঠানোর উদ্যোগ শুরু করে দেন ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।

চন্দ্রায়ন-২ প্রকল্পে এবার আর কক্ষপথে মহাকাশযান নয়, একেবারে চন্দ্রপৃষ্ঠে যান নামানোর সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীরা। সেই লক্ষ্যেই শুক্রবার তামিলনাড়ুর মহেন্দ্রগিরির সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ইসরোর প্রোপালশন কমপ্লেক্সে সফলভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকাশযান নামানোর পরীক্ষা করলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। চন্দ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১০০ মিটার উচ্চতা থেকে চন্দ্রায়ন-২'র ল্যান্ডারটি চাঁদের বুকে নামানো হবে। যাতে সেটি নামার সময় কোনও সমস্যা না হয় এবং সেটি খারাপ না হয়ে যায়, তা খতিয়ে দেখার জন্যই এই পরীক্ষা বলে ইসরোর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এক বিজ্ঞানীর কথায়, চন্দ্রপৃষ্ঠে যে ল্যান্ডারটি নামানো হবে, সেটির নাম 'বিক্রম'। সেটি যাতে ঠিকভাবে কাজ করে, সেটা দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই যান যাতে নিরাপদে চন্দ্রপৃষ্ঠে নামতে পারে, সেটা সবার আগে দেখা প্রয়োজন। তাই শুক্রবার তামিলনাড়ুর ইসরোর ওই কেন্দ্রে 'ল্যান্ডার অ্যাকিউয়েটর পারফরমেন্স টেস্ট' (এলএপিটি) করা হয়। 
চন্দ্রপৃষ্ঠের আবহাওয়ার সঙ্গে ভূ-পৃষ্ঠের আবহাওয়ার অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তারতম্যের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের বস্তুর ওজন চন্দ্রপৃষ্ঠে কম হয়ে যায়। সেই কথা মাথায় রেখেই ইসরোর এই পরীক্ষায় চন্দ্রায়ন-২'র ল্যান্ডারটির ওজন অনেক কম রাখা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে বায়ুমণ্ডলের চাপ যেহেতু বেশি, তাই চন্দ্রপৃষ্ঠে শূন্যতা অনেক বেশি। সেই কথা মাথায় রেখেই ল্যান্ডারের এই পরীক্ষায় ইঞ্জিনেও কিছু বদল করা হয়েছিল। তারপরে সেটিকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ক্রেনের হুকের সাহায্যে ১০০মিটার উচ্চতা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়। মূলত সেটি উপর থেকে নীচে ফেললে ঠিকভাবে কাজ করে কি না, তা দেখার জন্যই এই পরীক্ষা। পাশাপাশি নীচে পড়ার পর, সেটি যাতে স্বাভাবিকভাবে কাজ শুরু করে এবং বিভিন্নদিকে ঘুরে বেড়াতে পারে— সেই পরীক্ষাও শুক্রবার করে দেখা হয়। 
ইসরোর ওই বিজ্ঞানীর কথায়, চন্দ্রপৃষ্ঠের পড়ার পর ল্যান্ডারটির সেন্সর, নেভিগেশন ব্যবস্থা, গাইডেন্স এবং কন্ট্রোল সহ অন্যান্য সমস্ত যন্ত্রাংশ (এনজিসি) ঠিকভাবে কাজ করে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য শুক্রবারের এই পরীক্ষা করা হয়। সামগ্রিক পরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত চন্দ্রায়ন-২'এর ল্যান্ডার চন্দ্রপৃষ্ঠের নামার পর ঠিকভাবেই কাজ করবে। উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার চন্দ্রায়ন-২ অভিযানের আরও একটি জটিল অবস্থারও সফলভাবে পরীক্ষা করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষার পর ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চন্দ্রায়ন-২'এর ল্যান্ডারের সব পরীক্ষা সফলভাবে সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। 'বিক্রম'কে চন্দ্রপৃষ্ঠে নিরাপদে নামানো সম্ভব এটা বলাই যায়। শুধু তাই নয়, চন্দ্রপৃষ্ঠে নামার পর 'বিক্রম'এর সব যন্ত্রাংশ (এনজিসি ব্যবস্থা) সঠিকভাবেই কাজ করবে, সেবিষয়েও নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা।