ভিড় মেট্রোয় যুবতীকে ঘিরে ধরে হেনস্থা-কটূক্তি, টালিগঞ্জে ধৃত ১০ যুবক


কয়েক মাস আগেই মেট্রোযাত্রা দুঃস্বপ্নের হয়ে উঠেছিল এক যুগলের। একই রকম ভাবে সেই রকমই দুঃস্বপ্নের শিকার হলেন এক যুবতী।

বিকেলের ভিড় মেট্রো। কোনও মতে এসপ্লানেড থেকে মেট্রোতে উঠে একটু দাঁড়ানোর জায়গা খুঁজছিলেন বছর চব্বিশের এক যুবতী। তাঁর চারদিকে বেশ কয়েক জন যুবক।

ভিড়ের মধ্যেই গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই বেশ বুঝতে পারছিলেন তাঁর চার পাশের যুবকদের নজর তাঁর দিকেই। নড়াচড়ার জায়গা নেই। তাই কার্যত অস্বস্তিকর দৃষ্টি উপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই যুবতী।  

কিন্তু এবার আর দৃষ্টি নয়। এবার ধীরে ধীরে ঘিরে থাকা যুবকরা আরও একটু এগিয়ে আসতে থাকে। গায়ের কাছে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর তাদের হাত এগিয়ে আসতে থাকে। যুবতী ক্রমাগত কোণঠাসা হয়ে কুঁকড়ে যেতে থাকেন, ওই যুবকদের ঘেরাটোপে। তাদের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছিল এরা প্রত্যেকেই একসঙ্গে এবং পরিচিত।

খালি শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পর্শ নয়। কানে ঢুকছে তাঁকে উদ্দেশ্য করে যুবকদের করা ঘিনঘিনে মন্তব্য। ক্রমাগত তাঁর চারদিকে তৈরি হওয়া যুবকদের বৃত্তটা ছোট হতে থাকে। অথচ অভিযোগ, আশে পাশে থাকা যাত্রীরা সব দেখে শুনে বুঝেও কার্যত চোখ বন্ধ করে ছিলেন। কেউ প্রতিবাদ করেননি ওই যুবকদের বিরুদ্ধে।  

শেষ পর্যন্ত আর চুপ করে থাকতে পারেননি ওই যুবতী। ট্রেন টালিগঞ্জ ঢোকার একটু আগে চলন্ত মেট্রোতেই উত্যক্ত করা এক যুবককে সপাটে গালে একটা চড় মারেন তিনি। ততক্ষণে ট্রেন টালিগঞ্জ স্টেশনে ঢুকছে। ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় চারটে। ফের নিজেকে সেই যুবকদের ব্যুহ ভেদ করে প্ল্যাটফর্মে নামেন তিনি। আতঙ্ক উত্তেজনা তাঁর চোখে মুখে। সেই সময় প্ল্যাটফর্মে থাকা এক আর পি এফ কর্মী বলেন, "হঠাৎ দেখি এক মহিলা বাঁচাও বাঁচাও বলে আর্ত চিৎকার করছেন। তার চারদিকে কয়েকজন যুবক ঘিরে রয়েছে। ঘটনাটি ঘটছে স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেলের সামনে।" যুবতীর চিৎকার শুনে ততক্ষণে ছুটে গিয়েছেন মেট্রো রেলের কয়েকজন কর্মী এবং এক মহিলা আরপিএফ সাব ইন্সপেক্টর। মেট্রোর এক কর্মী বলেন, "মেয়েটি হাফাচ্ছিল। ওই ছেলেগুলো ওকে ঘিরে ধরে শাসাচ্ছিল। কেন মেয়েটি ওদের একজনকে চড় মেরেছে।"

ওই নির্যাতিতা যুবতী কোনও ক্রমে ঘটনাটি ছোট করে বলেন পুলিশ কর্মীদের। প্ল্যাটফর্মে থাকা অন্য ট্রেন যাত্রীরাও এগিয়ে এসেছেন। পুলিশ যাত্রীদের সহযোগিতায় পাকড়াও করে দশ জন যুবককে। খবর দেওয়া হয় রিজেন্ট পার্ক থানায়। সেখান থেকে এক পুলিশ অফিসার এসে মহিলার অভিযোগ নেন। গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত দশ যুবককে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবতীর বাড়ি হুগলির কোন্নগরে। টালিগঞ্জ যাচ্ছিলেন একটি কাজে। আর ওই অভিযুক্ত যুবকদের সবার বয়সই ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এরা সবাই গড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। ধর্মতলায় পুজোর কেনা কাটা করতে এসেছিল।