ক্লাসে চেয়ার বাদ, ক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা


ক্লাসরুমে পড়াতে গিয়ে চেয়ার মিলবে না শিক্ষকদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্ত 'অপমানজনক' বলে মনে করছে শিক্ষক সমাজের একাংশ। এমনকি, এই উদ্যোগ 'বাস্তবসম্মত' নয় বলেও মনে করছে শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ডিআই নজরুল হক সিপাই জানিয়েছিলেন, ক্লাসে 'টিচিং-লার্নিং' পদ্ধতি ঠিক করতে সকল পড়ুয়ার কাছে শিক্ষক যাতে পৌঁছতে পারেন, তার জন্যেই চেয়ার বাদের সিদ্ধান্ত। সে ক্ষেত্রে ৪০ মিনিট ক্লাসের পুরোটাই দাঁড়িয়ে অথবা হাঁটাচলা করে কাটাতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

এখানেই আপত্তি তুলছে শিক্ষক সমাজের একাংশ। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের কথায়, ''বাইরে থেকে শিক্ষকদের উপরে এ ভাবে নির্দেশিকা চাপিয়ে দেওয়া অপমানের সামিল। শিক্ষকতা কোনও চাকরি নয়, ব্রত। কোনও চাপ দিয়ে সেটা করানো যায় না।'' বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, ''কোনও উন্নত দেশেই এ ধরনের নিয়ম আছে বলে জানা নেই। চেয়ার না থাকলেই ক্লাসে ভাল পঠনপাঠন হবে, চেয়ার থাকলে হবে না— এই ভাবনা বাস্তবসম্মত নয়।'' পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ''এখনও সরকারি নির্দেশিকা বেরোয়নি। সেটা বেরনোর আগে আশা করি বাস্তবসম্মত ভাবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। চেয়ার থাকা না থাকাটা কোনও বিষয়ই নয়।'' সমালোচনার মুখে ডিআই নজরুলবাবু অবশ্য বলছেন, ''অপমান করা নয়, শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত করতেই এই পদক্ষেপ।''

তবে একটি বিষয়ে ডিআইয়ের সঙ্গে একমত কৃষ্ণপ্রসন্নবাবু। তিনি বলছেন, ''৩৭ বছরে শিক্ষকতায় এক দিনও চেয়ারে বসে পড়াইনি। আমি মনে করি, চেয়ারে বসে শিক্ষকতা করা যায় না।'' তবে পড়ানোর সময়ে এক জন শিক্ষক অথবা শিক্ষিকা চেয়ারে বসবেন কি না, তা তাঁর উপরেই ছেড়ে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন কৃষ্ণপ্রসন্নবাবু। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার ডিআই বলেন, ''প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সহমতের ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।''

ক্লাসে চেয়ার 'ব্রাত্যের' সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুলশিক্ষা দফতরের দাবি, বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি। যথেষ্ট সরকারি সুযোগসুবিধা থাকা সত্ত্বেও পঠনপাঠনের মানোন্নয়ন না হলে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল। নিয়মানুযায়ী, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকপিছু ৩০ জন পড়ুয়া থাকার কথা থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সেই অনুপাত থাকে শিক্ষকপিছু ৪৫ এবং ৫০ জন পড়ুয়া। তাই প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছনোটাই শিক্ষকদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সেখানে খামতি থাকলে বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলি আরও পিছিয়ে পড়বে— এই যুক্তিতেই বাড়তি পদক্ষেপ।