মশা-বধে গবেষকের অস্ত্র ‘বন্ধু’ পোকার হরমোনই


ধূপ, রিপেল্যান্ট বা কয়েল নয়। মশককুলকে নির্মূল করতে একদল বিজ্ঞানীর অস্ত্র এ বার এমন সব পতঙ্গের হরমোন, যারা মশার সঙ্গে একই ধরনের পরিবেশে থাকে। এই হরমোন শুধু মশাকেই নিশানা করে, ধূপ-রিপেল্যান্ট-কয়েলের মতো মানুষের শরীরের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। আমেরিকার নিউ জার্সির রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চার গবেষক এর জন্য হাতিয়ার করছেন 'হেটেরো-ডিসএমিনেশন' প্রযুক্তিকে। 

এই গবেষকদলে রয়েছেন কলকাতার জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার গবেষক দেবীশঙ্কর সুমন। বাকি ৩ জন আমেরিকার র৵ান্ডি আর গওগলার, বো তাও এবং ই ওয়াং। ইতিমধ্যেই রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রযুক্তির পেটেন্ট পেতে আবেদন জানিয়েছে। সোমবার সুমন 'এই সময়'কে জানান, 'শুধু কীটনাশক স্প্রে করে বা কামান দেগে মশার বংশ ধ্বংস করা যায় না। তাদের কিছু সূতিকাগার চোখ এড়িয়ে থেকেই যায়। যা থেকে প্রতি বছরই নির্দিষ্ট সময়ে তাদের বংশবৃদ্ধি হয়, মশারা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ আক্রান্ত হন ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়ায়। আমরা মশার এই লুকোনো সূতিকাগারগুলিকেই ধংস করতে চাই। তা না-হলে প্রতি বছর মশার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব নয়।' 

কী ভাবে? এই গবেষকদল কাজ করেছে এডিস অ্যালবোপিকটাস (এশিয়ান টাইগার মসকুইটো) প্রজাতির মশার উপর, যা ডেঙ্গি-চিকুনগুনিয়া-হলুদ জ্বর সহ নানা রোগের বাহক। সুমনের ব্যাখ্যা, 'আমরা দেখেছি, নোংরা জলেই হোক বা পরিষ্কার জলে, যেখানে মশা বেড়ে ওঠে, সেখানে তাদের সঙ্গে পাওয়া যায় মশার 'বন্ধু' পতঙ্গের লার্ভাও। মশা নিধনে সাহায্য নেওয়া হবে এই বন্ধু-পোকাদেরই, যাদের কাইরোনোমিড বলা হয়।' ডিম থেকে লার্ভা ও পিউপা হয়ে পূর্ণাঙ্গ পতঙ্গের বিকাশ (মশা ও কাইরোনোমিড দু'জনের জন্যই) একটি হরমোন-নির্ভর পদ্ধতি, যে পাইরিপ্রক্সিফেন হরমোনকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর বা আইজিআর। ঘটনা হল, মশার লার্ভা-পিউপা তো বটেই, এই আইজিআরের ক্ষমতা রয়েছে ছোট মশাকেও মেরে ফেলার। 

সেই কারণেই পাইরিপ্রক্সিফেনকে শুধু পতঙ্গ বিকাশের হরমোন নয়, এক ধরনের কীটনাশক হিসেবেই দেখছেন সুমন ও তাঁর সহযোগীরা। সুমন বলছেন, 'এই হেটেরো-ডিসএমিনেশন প্রযুক্তিতে পাইরিপ্রক্সিফেনে সিক্ত করার পর মশার বন্ধু পোকাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক নিয়মেই তারা ওই একই পরিবেশের সূতিকাগারে হাজির হয়ে সেখানকার জলে ছড়িয়ে দেবে পাইরিপ্রক্সিফেন, যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মশার ডিম ও লার্ভা। ওই সূতিকাগারে থাকা ছোট মশাও এর হাত থেকে রেহাই পায় না।' সবচেয়ে বড় কথা, পরিবেশের উপর বা মানুষের শরীরে এই প্রযুক্তির বিরূপ প্রভাব নেই।