আধ ঘণ্টায় ৪০০ রোগীর জীবন বাঁচিয়েও প্রাপ্তি উপেক্ষা


কলকাতা : ওঁরা না থাকলে এক জন রোগীকেও হয়তো বাঁচানো যেত না। তবু ওঁদের দাম নেই। এতে দুঃখ নেই, শুধু রয়েছে প্রচুর অভিযোগ। সমস্যা হল কাজ ছেড়ে যেতেও পারছেন না। এমনই 'না ঘরকা, না ঘটকা' অবস্থা মেডিক্যাল কলেজের গ্রুপ ডি অস্থায়ী কর্মীদের।

এদিন ভোরবেলা আগুন লাগে মেডিক্যাল কলেজের এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে। ঘটনাস্থলে তখনও নেই কোনও ডিজাস্টার ম্যনেঞ্জমেন্টের দল। কে বাঁচাবে এতগুলো রোগীকে। ভরসা বাপ্পা আশিষদের মতো গ্রুপ ডি কর্মীরা। প্রায় ৪০০ জন গ্রুপ ডি অস্থায়ী কর্মী রয়েছে মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের যে কোনও বিপদে এরাই সবথেকে বড় ভরসা। যেমনটা ছিল বুধবার ভোরে আগুন।

আশিষ রায় জানালেন, "আধ ঘণ্টায়, মাত্র আধ ঘণ্টায় জানেন ৪০০-র রোগীকে এমারজেন্সি ওয়ার্ডে ট্রান্সফার করেছি। কেউ ছিল না তখন। আমরা না থাকলে কি হত তাহলে ভাবুন। অথচ আমরা কোনও সুবিধা পাই না। আজ সারাদিনে এক বোতল জলও আমাদের কেউ দেয়নি।"

বুধবার বেলা তিনটে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের দিকে মেডিক্যাল কলেজে। পুলিশ সিল করে দিয়েছিল এলাকা। এমসিএইচ বিল্ডিংয়ে বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছিল সবেমাত্র। ভিতরের জমে থাকা জল পাম্প দিয়ে বার করা চলছে। ঝাঁটা দিয়েও জল সরানোর কাজ করছিলেন আকাশি নীল রঙের জামা, গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট পরা মেডিক্যাল কলেজের অস্থায়ী কর্মীরা। বাকিরা কেউ একটু জিড়িয়ে নিচ্ছেন।

ওঁদের মধ্যেই বাপ্পা দাস বললেন, "বছর পাঁচেক কাজ করছি। আমাদের কোনও আইডি কার্ড নেই। কোনও ৪০০ জনের মধ্যে ১০-১৫ জনের জন্য ড্রেস রয়েছে। বাকিদের কোনও ড্রেস নেই। তবু আমরা কাজ করছি। কাজ ছেড়ে যেতেও পারছি না। আমাদের দিকে কেউ দেখেই না।"

সোমেন মল্লিক ২০১১ থেকে গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে কাজ করছেন মেডিক্যাল কলেজে। তিনি বলেন, "ডিউটি আট ঘণ্টা। মাঝে মাঝে ২৪ ঘণ্টাও ডিউটি হয়ে যায়। ওভার টাইমের কোনও লিমিট নেই। পয়সাও নেই। পি.এফ দেওয়া হবে বলা হয়েছিল। সে সব আর পাওয়া যায়নি। মাইনের স্লিপ যা দেয় ওর থেকে যারা রাস্তায় কাগজ কুড়োয় ওদের কাছে পরিষ্কার কাগজ আছে। পকেটে রেখে বাড়ি নিয়ে যেতে গিয়ে ছিঁড়ে যায়।"

কল্লোল নামে এক কর্মীর অভিযোগ, "২২৫ টাকা রোজ হিসাবে মাইনে পাই। কোনওদিন কাজে আসতে না পারলে মাইনে কাটা যায়। পেটের টান আছে তাই কাজ করে যাই। সারাদিনে কত নেতা মন্ত্রী এল সবাইকে চা, জল খাওয়াচ্ছে। এক গ্লাস জলও কেউ দেয়নি।"

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, "আমি এসব কিছু জানি না। আগে সব অভিযোগ জানব তারপর ভেবে দেখা যাবে। না জেনে কিছু বলতে চাই না।"

বাগড়ি মার্কেটে দমকল , মাঝেরহাটে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের কর্মীদের জল, খাবার বিলিয়েছিল সাধারণ মানুষ। কিন্তু এখানে তেমন কিছু হওয়ার সুযোগও ছিল না। শুধু ভরতি হয়েছে অভিযোগের ঘড়া। জলের বদলে যেন উপচে পড়ছে শুধুই হতাশা।